সেকশন

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

আত্মবিশ্বাসী মুসলিম শক্তিকে ভয় পায় ইসরায়েল

আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

যখন একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র একটি অ-পারমাণবিক দেশের ওপর হামলা করে–এবং বিশ্ব নীরব থাকে, তখন কী ঘটে? গত শুক্রবার ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা ছিল না। এটি ছিল মুসলিম প্রতিরোধ ক্ষমতার ধারণার বিরুদ্ধেই একটি কৌশলগত আঘাত। শীর্ষ ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা এবং তার পারমাণবিক অবকাঠামোকে ধ্বংসের চেষ্টা এই বার্তা দেয় যে, কোনো মুসলিম দেশকে সার্বভৌম সক্ষমতা অর্জন করতে দেওয়া হবে না। এটি ছিল একটি আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভরশীল মুসলিম শক্তির স্বাধীনভাবে নিজ এলাকাকে গড়ে তোলার বিরুদ্ধে হামলা।

ওয়ান নাইম ওয়ান মানসুর। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ইসলামিক স্টাডিজের গবেষণা সহযোগী এবং ফ্ল্যাগশিপ জার্নাল ‘ইসলাম অ্যান্ড সিভিলাইজেশনাল রিনিউয়াল’-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। তিনি বলছেন, কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো, একটি সত্যিকারের প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এ ধরনের হামলার সরাসরি জবাব দিয়েছে। ইরান ইসরায়েলের তেল আবিব এবং হাইফাসহ অনেক জায়গায় আঘাত হেনেছে। এর ফলে মনে হচ্ছে, তাদের দায়মুক্তির যুগ শেষ হচ্ছে।

পশ্চিমা গণমাধ্যমের অধিকাংশই ইসরায়েলের হামলাকে প্রতিরক্ষামূলক কাজ হিসেবে বলে তুলে ধরেছে। এটা হাস্যকর। কারণ, বাস্তবতা আরও উদ্বেগজনক। পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশের ওপর পূর্বপরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। যে দেশটির আসলে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। এটা আত্মরক্ষা বা প্রতিরোধ নয়। এটা হলো একচেটিয়া ক্ষমতা। আর একচেটিয়া ক্ষমতা স্থিতিশীলতা চায় না; তারা জবাবদিহি চায়।

ইসরায়েল এই অঞ্চলের একমাত্র অঘোষিত পারমাণবিক শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর তত্ত্বাবধানে নেই। অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও ২০২৪ সালে ইরানকে ১৫ বার আইএইএর পরিদর্শনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব শান্তি বয়ে আনেনি; বরং সহিংসতায় ইন্ধন যুগিয়েছে। গাজা থেকে দামেস্ক, বৈরুত থেকে তেহরান–পুরো এলাকায় তাদের প্রশ্নাতীত আধিপত্য থাকা উচিত বলে ইসরায়েল মনে করে। সেজন্য সবকিছু তারা করছে। তাদের এই মনে করাটাই বর্তমান সংকটের মূলে।

এই সংকট থেকেই ইরাককে সেই ১৯৮১ সাল (ইরান-ইরাক যুদ্ধ) থেকে শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধে ধ্বংস করা হয়েছে। সিরিয়া (২০০৭) এবং গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়াকে সামরিক বা কূটনৈতিকভাবে দমন করা হয়েছে।

ইরানে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্সযদি শান্তিই লক্ষ্য হয়, তবে কৌশলগত ভারসাম্যই তার ভিত্তি হওয়া উচিত। এই অঞ্চলের ওপর ড্রোন ও বিমান হামলার মাধ্যমে সংঘাত চাপিয়ে দিয়ে আরও বেশি অস্থিরতা সৃষ্টির প্রয়োজন নেই। বরং প্রয়োজন হলো আত্মবিশ্বাসী, সক্ষম মুসলিম শক্তির উত্থান, যারা আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে, সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করতে পারবে।

ইরান তার সমস্ত অভ্যন্তরীণ জটিলতা সত্ত্বেও, একটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কারণ, ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং ইসরায়েলি আধিপত্যের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধকে প্রতিপক্ষের অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে ধরা হয়। ভন্ডামি এটাই যে, ইসরায়েল যখন পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হয়, তখন তাকে দায়িত্বশীল প্রতিরোধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইরান যখন কৌশলগত আত্মনির্ভরশীলতা চায়, তখন তাকে দুর্বৃত্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই দ্বৈত মানদণ্ড আর গ্রহণযোগ্য নয়। কৌশলগত আত্মনির্ভরশীলতা চরমপন্থা নয়; এটি একটি মৌলিক সার্বভৌম অধিকার।

সমালোচকরা হয়তো জিজ্ঞাসা করতে পারেন: কেন পাল্টা মুসলিম সক্ষমতার প্রয়োজন? প্রয়োজন কারণ, এই দমন-পীড়ন ছিল সভ্যতাকেন্দ্রিক। ফিলিস্তিনিদের অধিকার হরণ, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত কর্মসূচির লক্ষ্যবস্তু হওয়া এবং মুসলিম শক্তিকে সহজাতভাবে অস্থিতিশীল হিসেবে চিত্রিত করার বৃহত্তর আখ্যান–এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলোকে কেবল একটি মুসলিম শক্তিই বিশ্বাসযোগ্যভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের জোটের কারণে আপস করতে বাধ্য। চীন ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক, নৈতিক এবং ধর্মীয় স্বার্থের অভাব রয়েছে। ব্রাজিল বা দক্ষিণ আফ্রিকা সংহতি জানাতে পারে। কিন্তু তারা এই অঞ্চলের অংশ নয়। আর মুসলিম শক্তিগুলো এই অঞ্চলেরই অংশ।

ধর্মীয় দ্বৈত মানদণ্ড অবশ্যই ধর্মীয় সমতা দ্বারা সংশোধন করতে হবে। ইসরায়েল যেমন ইহুদি পরিচয়কে মিথ্যাভাবে একটি কৌশলগত সম্পদ হিসেবে দাবি করে, তেমনি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকেও তাদের নিজস্ব সভ্যতার বৈধতা জাহির করতে হবে, হুমকি হিসেবে নয়, বরং আঞ্চলিক শৃঙ্খলা গঠনে ন্যায্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে।

এটি পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসারের আহ্বান নয়, বরং এটি কৌশলগত আত্মমর্যাদার আহ্বান। এটি প্রতিটি জাতির বিশেষাধিকার, যারা স্বাধীনতা ও ভয়হীন জীবনযাপন করতে চায়।

টাইমলাইন: মধ্যপ্রাচ্য সংকট
২৫ জুন ২০২৫, ১৭:০৮
কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অবশেষে স্বপ্ন পূরণের পথে চীনের লাখ লাখ তরুণ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘গাওকাও’ ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে দেশটির প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ...
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা সংঘর্ষ শেষে যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যের এই দ্বন্দ্ব ক্রমশ বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছিল, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র...
গত ১১–১২ দিনের বিধ্বংসী যুদ্ধ। শুরু হয়েছিল ইরানে ইসরায়েলের হামলার মাধ্যমে। পরে জড়াল আমেরিকা। এই যুদ্ধের কারণ ‘ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে’। অভিযোগটা নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের, যা ডাহা মিথ্যা।...
আল জাজিরার বিশ্লেষণ 
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাত নাটকীয় মোড় নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মাঝেও। যদিও ট্রাম্প সম্ভাব্য এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে এক ধরনের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে তুলে...
লোডিং...
পঠিতনির্বাচিত

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.