সেকশন

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

ইরানের ধাক্কা সাময়িক, কী করবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা সংঘর্ষ শেষে যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যের এই দ্বন্দ্ব ক্রমশ বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছিল, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যখন ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর আওতায় ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট আগে ইরান থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়, যা অনেক বিশ্লেষকের মতে, তেহরানের শেষ মুহূর্তের ‘বীরত্ব প্রদর্শনের’ অংশ ছিল।

নাটকীয় মোড় নেয় সংঘাত

এই সংঘর্ষ একের পর এক চমক নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে শেষ ১২ ঘণ্টায়। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে যুক্ত হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। অথচ দু দিনের মাথায় মার্কিন বি-টু বোমারু বিমান ইরানে তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়, যা গোটা অঞ্চলে বড় ধরনের উত্তেজনার জন্ম দেয়।

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা। ছবি: সংগৃহীতগত রাতে ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়, এতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে যে এই আঞ্চলিক সংঘাত হয়তো বৈশ্বিক যুদ্ধেই রূপ নিচ্ছে। এর ঠিক পরেই নাটকীয়ভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তেল আবিব ও তেহরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

সবাই জিতেছে: নিজ নিজ ভাষ্যে

এখন যুদ্ধবিরতির ফলে তিনটি পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও ইসরায়েল–নিজেদের ‘বিজয়ী’ হিসেবে তুলে ধরতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, তারা তেহরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। আর ইরান বলছে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের সামনে মাথা নত না করে সম্মান রক্ষা করেছে। এখন তিন দেশেই প্রচারযন্ত্র পুরো গতিতে কাজ করছে জনগণকে ‘বিজয়ের গল্প’ শোনাতে।

যুক্তরাষ্ট্র: ‘শান্তির নায়ক’ ট্রাম্প

প্রথমে কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে থাকলেও রোববার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের গুন্ডা’ আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ার করেন–‘শান্তির পথ না ধরলে ভবিষ্যতের হামলা আরও ভয়াবহ হবে’। ট্রাম্প বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ হয়েছে, যদিও মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছেন, ‘চরম ক্ষতি’ হলেও কিছু স্থাপনা টিকে থাকতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্সতবে যুক্তরাষ্ট্র জানে, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পের জন্য ক্ষতিকর। তাই যখন ইরান কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়, তাও আবার পূর্ব-সতর্কবার্তা দিয়ে, তখন ট্রাম্প পাল্টা জবাব দেননি। বরং এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘কোনো মার্কিন নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ওরা যা বলার ছিল বলে ফেলেছে, আশাকরি, আর ঘৃণা ছড়াবে না।’

এতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সেনা হারায়নি, শক্তি প্রদর্শন করেছে এবং শান্তির বার্তা দিয়ে কূটনীতিতে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারছে।

ইসরায়েল: শক্তির পরিচয় 

যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার আগেই ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। তারা ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী শাদমানি, মোহাম্মদ কাজেমি ও হাসান মোহাকে-কে হত্যাও করেছে।

এই হামলাগুলো ইসরায়েলের সেনাশক্তির ইমেজ আরও বাড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন—যুক্তরাষ্ট্রকে সংঘাতে যুক্ত করতে পেরেছে, যদিও প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র তা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প পরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ইউনিট হিসেবে উপস্থাপন করেন, যা ইসরায়েলের জন্য কূটনৈতিক জয়।

এই অবস্থান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্যও রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।

ইরান: প্রতিরোধের কৌশলী বার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরান কৌশলগতভাবে বিপাকে পড়ে। পাল্টা জবাব দেওয়া জরুরি ছিল, কিন্তু শত্রুপক্ষ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাই ইরান একদিকে মুখরক্ষা, অন্যদিকে উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুঁজছিল। সূত্র অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ খামেনি বাংকার থেকে নির্দেশ দেন হামলার, কিন্তু তা সীমিত রাখতে।

তাই আল-উদেইদ ঘাঁটি—যা অপারেশন মিডনাইট হ্যামারের সমন্বয় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত তা নির্বাচিত হয়। ইরান আগেভাগেই হামলার বিষয়ে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, কাতার তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে এবং মার্কিন সেনারা নিরাপদ স্থানে সরে যায়। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘তাদের প্রতিক্রিয়া দুর্বল, যেমনটা আমরা আশা করেছিলাম। তারা আমাদের আগেই জানায়, এজন্য আমরা ধন্যবাদ দিচ্ছি।’

এর মাধ্যমে ইরান দেখাতে পারল, তারা ভয় পায়নি, শক্তি দেখিয়েছে, কিন্তু আরও যুদ্ধ চায় না।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য কনভারসেশনের এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল ও আমেরিকা হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি হয়তো সাময়িকভাবে ধাক্কা খাবে, তবে এটি ইরানের বোমা তৈরির সংকল্প আরও দৃঢ় করতে পারে।

ইরান ইতোমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার প্রতিরোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ছবি: সংগৃহীতবিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও এনপিটি ত্যাগ করতে পারে, যা বৈশ্বিক নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।

ইসরায়েল মনে করে, ইরানের পরমাণু বোমা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইরান মূলত নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও ভবিষ্যতের হামলা ঠেকাতেই এই সক্ষমতা চায়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধ ও হামলার বদলে কূটনৈতিক সমাধানের এখনো শেষ আশাটুকু রয়ে গেছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা সেই সম্ভাবনাও নষ্ট করে ফেলতে পারে। যুদ্ধবিরতি হলেও বহু প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। বিশ্ব আশা করছে, সব পক্ষ আবার কূটনৈতিক টেবিলে ফিরে আসবে এবং একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে।

তথ্যসূত্র: দ্য কনভারসেশন, বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা

টাইমলাইন: মধ্যপ্রাচ্য সংকট
২৫ জুন ২০২৫, ১৭:০৮
২৪ জুন ২০২৫, ১৪:৫৪
ইরানের ধাক্কা সাময়িক, কী করবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য দিয়েছে বেশকিছু মার্কিন সংবাদমাধ্যম। এমন ঘটনা সত্য হলে ইরানের পরবর্তী...
আল জাজিরার বিশ্লেষণ 
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাত নাটকীয় মোড় নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মাঝেও। যদিও ট্রাম্প সম্ভাব্য এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে এক ধরনের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে তুলে...
গত বিশ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সঙ্গে জর্জ ডব্লিউ বুশ নামটা জড়ানো ছিল। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেষ্টা করছেন যেন এই যুদ্ধের সঙ্গে তাঁর নামও জড়ায়। ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ইরানের বিরুদ্ধে...
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। তিনি এমন সম্পর্কের ব্যাপারে ইঙ্গিত...
মাদারীপুরে এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ ও নানা অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান পরিচালনা করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পৌর এলাকার দরগাহ শরীফ সংলগ্ন হযরত শাহ মাদার (র.) দরগাহ শরীফ এতিমখানাতে এ...
লোডিং...
পঠিতনির্বাচিত

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.