আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় ৩ প্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী একমাস আগে উপ-নির্বাচনে জয়ী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, দুইবারের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন। মঈন এবারও স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন।
এই তিন প্রার্থীর আগের নির্বাচনে এবং বর্তমানে দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে অর্থ-সম্পদে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়েনি। তাঁদের আর্থিক হিসেবে কোটির অংক নেই কারোরই।
এছাড়া এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে মো. আবুল হাসনাত। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী হাসনাত তাঁর হলফনামায় পেশা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তাঁর নগদ টাকার পরিমাণ ৫ লাখ। স্বর্ণ রয়েছে ৫০ তোলা। মূলধন হিসেবে দেখিয়েছেন ২৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনের অপর তিন প্রার্থীর তুলনায় অনেক কম।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু পড়াশুনায় এমবিএস (মাস্টার্স অব বিজনেস স্টাডিস)। এবারের নির্বাচনে তিনি তাঁর নিজ নামে নগদ টাকা দেখিয়েছেন ১২ লাখ ২২ হাজার ১৬৪ টাকা আর স্ত্রীর নামে ২২ লাখ ২৫ হাজার ৩৩২ টাকা। ২০১৮ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে তিনি যে হলফনামা দেন সেখানে তাঁর নগদ টাকার পরিমাণ দেখানো হয় ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৬ টাকা। আর স্ত্রীর নামে তখন ছিল ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩২ টাকা। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ কমেছে। আগে ৯ লাখ ১২ হাজার ৬৯৬ টাকা জমা দেখানো হলেও এখান জমা রয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ টাকা।
বন্ড-ঋণপত্র ও শেয়ারে বিনিয়োগ ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা আগের মতোই আছে। তবে পোস্টাল-সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪০ টাকা। এছাড়া চাকরি থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৪৬ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৯ হাজার ৬৮ টাকা। ৩ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি ৫ বছর আগেও ছিল, এখনও রয়েছে। স্বর্ন নিজ নামে ২০ তোলা এবং স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণ রয়েছে। তাঁর নামে বর্তমানে কৃষি জমি রয়েছে ৮ শতক। যার মূল্য ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫২৫ টাকা। এটি আগের হলফনামায় নেই। এছাড়া বর্তমানে ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪১৮ টাকা মূল্যের ১৫৮ দশমিক ৯৮ শতক অকৃষি জমি রয়েছে নিজের ও স্ত্রীর নামে। ৩ লাখ ৮৪ হাজার ১৪২ টাকা মূল্যের একটি দালান রয়েছে।
মো. মঈন উদ্দিন এম কম পাস। ব্যবসা থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় যা ছিল ১২লাখ ৯৩ হাজার টাকা। চাকরি থেকে সেসময় নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয় ৫ লাখ ১০ হাজার ৭৩ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়, ব্যাংক আমানত থেকে আরও পান ১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা। নগদ টাকা রয়েছে তাঁর নামে ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০ টাকা আর স্ত্রীর নামে ৪৮ লাখ ১ হাজার ৭৬৮ টাকা। আগে যেটি ছিল তাঁর নিজের নামে ৪৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৩ টাকা।
আর স্ত্রীর নামে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪২১ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ নিজের নামে ১০ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ৫৬ লাখ ৫৯ টাকা। আগে যা ছিলো তাঁর নিজের নামে ১৫ লাখ আর স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ টাকা। ১০ লাখ টাকার যানবাহন এবং স্ত্রী ও নিজের নামে ৫ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। সাড়ে ১১ লাখ টাকা মূল্যের বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্টে রয়েছে স্ত্রীর নামে। নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ডিভিএইচ ও পিএফ ঋণের পরিমান ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ২২১ টাকা।
জিয়াউল হক মৃধা শিক্ষাগত যোগ্যতা, তিনি বিএ, এলএলবি। কৃষি খাত থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় ৪০ হাজার টাকা। আগে ছিল ৩০ হাজার টাকা। পেশা থেকে বর্তমান আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগে যা ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে বাৎসরিক পারিতোষিক ও ভাতা হিসেবে বাৎসরিক পেয়েছেন আগে ২৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৫ টাকা। ওই হলফনামায় পত্রিকায় লেখালেখি থেকে বাৎসরিক ৪০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয় তাঁর। প্রভাষক হিসেবে বড় ছেলের আয় দেখানো হয় ৪ লাখ ৪০ হাজার। তাঁর হাতে বর্তমান নগদ রয়েছে ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং স্ত্রী এবং নির্ভরশীলদের নামে আরও ৪০ লাখ টাকা। আগে যেটি ছিল তাঁর নিজের নামে ৩৫ লাখ টাকা আর নিরর্ভরশীলদের নামে ১১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তাঁর নামে ব্যাংকে জমা অর্থের পরিমাণ ১৯ হাজার ৮৬৮ টাকা আর স্ত্রীর নামে ৭৭ হাজার ৯৪৮ টাকা।
৪৬ লাখ টাকা দামের গাড়ি আছে ১টি। স্ত্রী এবং নির্ভরশীলদের নামে স্বর্নালঙ্কার আছে ৪২ ভরি। যার মূল্য ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তাঁর নামে কৃষি জমি নেই। তবে স্ত্রীর নামে ১৬৩ শতাংশ এবং যৌথ মালিকানায় ৮ একর জমি রয়েছে। যেগুলোর মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। মৃধার নামে ৩ তলা আবাসিক ভবন রয়েছে কালীকচ্ছ গ্রামে। যেটির মূল্য ৫১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৯ টাকা। এছাড়া পূর্বাচল নিউটাউনে ৫ কাঠা প্লট রয়েছে। যৌথ মালিকানায় আরও এক ১ একর ৫০ শতক জায়গা রয়েছে, যার মূল্য ৪২ লাখ টাকা।