‘চাইর বছর ধইরা আমার পুত আইয়ে না, কত ফোন দিছি পুতরে আইতো। পুত তো আইছে শেষ বিদায় লইয়া। পুত আইতাছে বইলা বাজার-সাজার কইরা সাজাইয়া থুইছি…।’ কথাগুলো বলে অঝোরে কাঁদতে থাকেন বৃদ্ধা হেলেনা বেগম।
ঢাকার বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের অগ্নিকাণ্ডে স্ত্রী–সন্তানদেরসহ নিহত ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসারের মা হেলনা বেগম। তাঁর কথাগুলোর মানে দাঁড়ায়– ‘চার বছর ধরে আমার ছেলে দেশে আসে না। এরমধ্যে অনেকবার ফোনকলে দেশে আসতে বলেছি। ছেলে অবশেষে এল, তবে শেষ বিদায় নিয়ে এসেছে। ছেলের বাড়ি আসার খবরে বাজার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মরদেহ এল।’
বৃদ্ধা হেলেনা এই অগ্নিকাণ্ডে প্রবাসী ছেলেসহ পুত্রবধূ ও তিন নাতি–নাতনি হারিয়েছেন।
সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসারের আর ৮ দিন পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইতালি ফিরে যাওয়ার দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নিয়তি ছিল অন্যরকম। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে ঠাঁই হয়েছে তাঁর। শুক্রবার বিকেলে কাউসার (৫০), তাঁর স্ত্রী স্বপ্না (৩৫), মেয়ে সৈয়দ কাশফিয়া (১৭), সৈয়দা নূর (১৩) ও ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহর (৭) মরদেহ দাফন করা হয়।
এরআগে বাদ আসর নামাজে জানাজা হয় বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশের মাঠে। পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে দাফন করা হয় তাঁদের ৫ জনকে। বিকেল ৩টায় চারটি ফ্রিজিং গাড়িতে করে তাঁদের ৫ জনের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছার পর শেষ দেখা দেখতে স্বজনরা ছাড়াও গ্রামের শতশত মানুষ ভিড় জমায়।
নিহত কাউসারের চাচাতো ভাই সৈয়দ আবুল ফারাহ তুহিন বলেন, ‘কাউসার আজ শুক্রবার বাড়িতে এসে সোমবার পর্যন্ত এখানে থাকবে বলেছিল। আগামী রোববার সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়ে উপজেলায় যাওয়ার কথা ছিলে তাঁর। কিন্তু এর আগেই লাশ হয়েছে তাঁরা। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে কাউসার ও তাঁর পরিবারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয় স্বজনরা। তবে এ খবর বিশ্বাস হতে চাইছিল না কারোর।’
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ১৫ বছর ধরে ইতালি প্রবাসে ছিলেন কাউসার। ৪ বছর পর দেশে আসেন মাস খানেক আগে। আগামী ১০ মার্চ আবার ইতালি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।
কাউসারের পরিবার রাজধানীর মধুবাগ এলাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাটেই বসবাস করত। এবার স্ত্রী-সন্তানদেরও কাউসারের সঙ্গে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, এরআগে গত সপ্তাহে একবার বাড়িতে এসেছিলেন কাউসার। শুক্রবার এসে একেবারে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ৩ ভাইয়ের মধ্যে কাউসার ছিলেন মেঝো। তাঁর বড় সৈয়দ সোহেবও ইতালি থাকেন। আরেক ভাই সৈয়দ আল আমিন দেশে ব্যাংকে চাকরি করেন। তাঁর বাবার নাম মৃত আবুল কাশেম।