লক্ষ্মীপুরে মেঘনার চরাঞ্চলে কৃষকের ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। গত কয়েকদিন কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চরমেঘা থেকে প্রায় কোটি টাকার সয়াবিন নিয়ে গেছে তারা। তিন বছর ধরে দুর্গম চরাঞ্চলে দস্যুদের উৎপাতে অতিষ্ঠ কৃষকেরা। মামলার পরও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
পুলিশ, স্থানীয় ও ভুক্তভোগী চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার দ্বীপ চরমেঘায় দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছেন দুই শতাধিক কৃষক। এবারও প্রায় ৫০০ একর জমিতে আবাদ হয়েছে সয়াবিন, বাদাম, ডাল, ধানসহ নানা ফসল। গত ৮ মে খেতের সয়াবিন তুলতে গিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, ভোলার রাসেল খাঁ, হালিম খাঁ, মিন্টু খাঁর নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক দস্যু কোটি টাকার ফসল লুট করে নিয়ে গেছে।
মেঘাচরসহ অন্যান্য চরাঞ্চলেও গত তিন বছর ধরে দস্যুদের আনাগোনা বেড়েছে। ফসল লুটের পাশাপাশি চাহিদামতো চাঁদা না পেলে হাত-পা কেটে নেওয়া থেকে হত্যার ঘটনাও ঘটছে সেখানে। এসব ঘটনায় কয়েকটি মামলা হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে পুলিশ। মেঘার অন্তত ২০টি চরে দস্যুদলের হামলা, লুটপাটের ঘটনায় নিঃস্ব হতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে। জীবন–জীবিকা আতঙ্কমুক্ত করতে পদক্ষেপ চান ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ উঠেছে, মেঘাচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে একটা বিশাল বাহিনী দিয়ে তাণ্ডব চালান রাসেল খাঁ নামের ডাকাত সর্দার। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তবে এসব ঘটনার পর চরমেঘাসহ বিভিন্ন স্থানে নদী ও স্থলে সাঁড়াশি অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত জড়িতরা কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন চাষিরা। পাশাপাশি চরম নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকায় ফসল তুলতে যাচ্ছে না তাঁরা।
তবে রাসেল খাঁর বক্তব্য না পেলেও তাঁর চাচা জানান, অন্যায়ভাবে তাঁদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এই লুটপাটের সঙ্গে তারা জড়িত নন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, জমির ফসল তুলতে চাইলে তারা চাঁদা চায়, না দিলে হাত ভেঙে দেয়। হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। দুই বছরে একটা শিশু বাচ্চাসহ তিনজনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনা মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে জড়িতরা। অনেক কষ্ট করে দার-দেনা করে এখন সয়াবিন ও ধানের আবাদ করি। সয়াবিন ও ধান তুলতে পারছি না। সবই লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত তা-বে বাড়ি ছাড়া হয় দুই শতাধিক চাষি। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে চর মেঘার সাধারণ মানুষ।
চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু ছৈয়াল ইউছুফ বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এর আগেও রাকিব এবং শেখ ফরিদসহ তিনজনকে হত্যা করেছে। অনেকের হাত–পা কেটে দিয়েছে। এখন সয়াবিন তোলার সময়। চাষিরা সয়াবিন তুলতে গেলে রাসেল খাঁ, হালিম খাঁ, মিন্টুখাঁর নেতৃত্বে ২০–২৫ জনের বাহিনী আছে তারা ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভি দাস বলেন, ‘এসব সম্পত্তি সরকারি খাস জমি। অবৈধভাবে দখল করে ভূমিদস্যুরা। এসব খাস জমি উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া যারা অন্যায়ভাবে চাঁদাবাজি ও ফসল লুটে নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। কৃষকেরা যেন, নিরাপদে ফসল ঘরে তুলে নিতে পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স। এলাকাটি দুগর্ম হওয়ায় সঠিক সময়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সমস্যা হওয়ার কারণে সন্ত্রাসীরা সহজে অপরাধ করে যাচ্ছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন বলেন, ‘চাঁদাবাজি, কৃষকদের মারধর, ফসল লুটে নেওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ অভিযান শুরু করা হয়েছে। দস্যুদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পাশাপাশি কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাষিদের পাশে দাঁড়াতে পারে, সেটাও চিন্তা করা হচ্ছে।’