আগামী নির্বাচন কখন হবে, সেই নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হবে কি না– এসব নিয়ে দেশের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সংঙ্গে মতবিনিময়কালে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেকগুলো প্রশ্ন। আগামী নির্বাচন কবে হবে? সেই নির্বাচনে কি সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারবে। ঘরের মধ্যে একটা বিরাট কিছু সত্য সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমরা সকলে চেষ্টা করছি সত্যটা নাই– এমন একটা ভান করার। না, সত্যটাকে সত্য বলেই স্বীকার করে এগোতে হবে। আওয়ামী লীগকে কি নির্বাচনে আনা হবে, আওয়ামী লীগ কি নির্বাচন করবে। আমাদের একটা বড় অংশ এই গনঅভ্যুত্থানের স্টেক হোল্ডার, তারা কিন্তু চাইছে না আওয়ামী লীগ নির্বাচন করুক। তারা বলছে, সকল বিচার শেষ করে নির্বাচন হবে। সুতরাং অনেক দিকে অনেক রকম প্রশ্ন আছে।’
আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন করলে ভবিষ্যতে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির এই সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। রুমিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন করলে আমরা শুধু আজকে-কালকে ভাবলে হবে না। ১০/২০ বছর পর কী হবে। ৫০ বছর পর নির্বাচনগুলোকে কীভাবে দেখা হবে। বলা হবে, ১৪/১৮তে যা হয়েছে ২৪-২৫ এর নির্বাচনেও তাই হয়েছে। সুতরাং এসকল কিছু মাথায় রেখে আমাদের নির্বাচনের পথটা পাড়ি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে আসে তাহলে নির্বাচনের মাঠের পরিবেশ কী হবে। একটা মারামারি-রক্তপাতের দিকে কী যাবে বাংলাদেশ। সুতরাং আমি মনে করি এই প্রশ্নগুলো সকলের মনে আছে। কিন্তু কেউ মুখে বলছে না। প্রশ্নগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত। এই প্রশ্নগুলোর সুরাহা বা সমাধান আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে হওয়া উচিত।’
শেখ হাসিনার পতনের পর আশঙ্কা অনুযায়ী বিপর্যয় ঘটেনি বলে মত দেন রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে ডেফিনেটলি যতোটুকু ডিজাস্টার হওয়ার কথা ছিল হাসিনা পতনের পর; হাসিনারা নিজেরাই বলতো আমরা চলে যাওয়ার পর লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। হাজার-হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হবে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সেভাবে; যেভাবে ওবায়দুল কাদের বলতেন, ‘‘কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, সবাইকে মেরে ফেলবে’’– সেরকম অবস্থা হয়নি। ধৈর্য-সহিষ্ণুতা দেখিয়েছে। সে জায়গা থেকে আমরা আশাবাদী হতেই পারি।’
রাজনৈতিক বিভাজন কমার লক্ষ্মণ দেখছেন উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘একটা বিভাজনের রাজনীতি গত ১৫ বছর ছিল। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি-বিপক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে, পাকিস্তানপ্রেমী, ভারতপ্রেমী ইত্যাদি। শক্তভাবে বিভাজিত করে রাখা হয়েছিলে। সেই জায়গা থেকে মনে হয় একটা উত্তরণ ঘটতে চলেছে।’
বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর নানা মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বিঘ্নে দেশ পরিচালনা করার সুযোগ দিতে রাজি নয়। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকার যেভাবে দেশের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে, সেটি অন্য কোনো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে দ্রুত একটি নির্বাচন দিলে সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।’
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবিএম মোমিনুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি।