পূর্ব ঘোষিত ২৮ ডিসেম্বর তারিখে হচ্ছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন। সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৮ জানুয়ারি। আসন্ন সম্মেলন ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে মুখোমুখি জেলা বিএনপির দুই গ্রুপ। বৃহস্পতিবার এক গ্রুপ শহরে সমাবেশ করে শক্তির মহড়াও দিয়েছে। এরই মধ্যে সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তনের ঘোষণা এল।
সম্মেলনের জন্য হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠে জেলা বিএনপির একটি অংশের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্য থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী যারা, তাদের ব্যানার-ফেস্টুন লাগতে শুরু করে শহরের এখানে-ওখানে। অন্য গ্রুপে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। নীরবে চলতে থাকে সম্মেলন প্রতিহতের প্রস্তুতি।
জেলা বিএনপির এই অংশের নেতারা অভিযোগ করেন, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই প্রহসনের সম্মেলন করার চেষ্টা চালানো হয়। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়নি। হয়নি তফশিল ঘোষণা, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি। ৫টি ইউনিট বিজয়নগর উপজেলা, আখাউড়া উপজেলা ও পৌরসভা, কসবা উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন বাকী। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই নবীনগর উপজেলা ও পৌর শাখার, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ও পৌর শাখা, সরাইল উপজেলায়। এই অবস্থায় কীভাবে সম্মেলন হয়?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির শেষবার সম্মেলন হয় ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর। এরপর ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর ওই কমিটি ভেঙে জিল্লুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ২০২৩ সালের ২৯ মে মাসে তাঁর মৃত্যুতে অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নানকে আহ্বায়ক করে আবারো ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এই কমিটি করা হয় ওই বছরের ১০ আগস্ট। গত ৪ঠা নভেম্বরে এই আহ্বায়ক কমিটিকে ৩২ সদস্যের করা হয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে দলের নেতাকর্মী ও শহরের মানুষের মধ্যে আলাচনা চলছিল জেলা বিএনপির সম্মেলন হবে কী হবে না। বুধবার ঢাকায় জেলা বিএনপির দু-গ্রুপের নেতাদের নিয়ে বসেন কেন্দ্রের নেতারা। সেখানে সম্মেলন পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলা বিএনপির প্যাডে সম্মেলন পেছানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, ‘ভোটারদের (বিএনপির অন্য অংশের নেতা) অনুরোধে এবং অধিকতর প্রস্ততির জন্যে ২৮ ডিসেম্বর সম্মেলন হচ্ছে না। সম্মেলন হবে ১৮ জানুয়ারি।’
এদিকে জেলা বিএনপির সম্মেলনের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী জেলা বিএনপির অপর অংশের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের পৌর মুক্ত মঞ্চে সমাবেশ করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে করা এই সমাবেশে স্বচ্ছতার সঙ্গে জেলা বিএনপির সম্মেলন করার দাবি জানানো হয়। সমাবেশে কসবা, আখাউড়া, বিজয়নগর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলের শতশত নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এসে যোগ দেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি।
এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন। সভার শুরুতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচি পাঠ করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবিএম মমিনুল হক।
এই সভায় বক্তারা আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলন করার চেষ্টার সমালোচনা করে বলেন, ‘অস্বচ্ছতার মাধ্যমে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল অনুধাবন করে কেন্দ্রীয় নেতারা তা স্থগিত করেছেন।’ তিনি দলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার জন্য দলের পরীক্ষিত, নির্যাতিত ও মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিয়ে দল গঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলা বিএনপির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত সম্মেলন করতে একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং ১৭ বছরের রাজনৈতিক জীবন বৃত্তান্ত নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যাচাই–বাছাই করে মূল্যায়নের অনুরোধ করেন।
জেলার ১৪ ইউনিটের মধ্যে ৫টি ইউনিটের সম্মেলন অসম্পন্ন রেখে এবং কোনো তফসিল ঘোষণা, প্রার্থীতার জন্যে ফরম বিতরণ, জমা-প্রত্যাহার এবং ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ না করে কীভাবে জেলার সম্মেলন হয় তা নিয়ে সভায় বিএনপির নেতারা প্রশ্ন তোলেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার খোকন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুল ইসলাম মঞ্জু, সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম খান রুমা, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন রিপন, সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন, কসবা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. ইলিয়াছ, আখাউড়া বিএনপি নেতা আবুল মনসুর মিশন, সাবেক যুবদল নেতা মনির হোসেন, বিএনপি নেতা নিয়ামুল হক, শেখ ছাদির, নজির উদ্দিন আহাম্মদ, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, জেলা যুবদল সভাপতি শামীম মোল্লা, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি হেবজুল বারী, মোস্তফা মিয়া, মোল্লা সালাউদ্দিন, ইকবাল খান, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজিদুর রহমান, রেজাউর রহমান প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আলী আজম।