নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় তিন জেলেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার পর ডাকাত সাজিয়ে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। মোবাইলে সেই ভিডিও ধারন করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আটক জেলেদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার বিকেলে হামলাকারীরা থানা ঘেরাও করে থানায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে। ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামে সরকারি আবাসন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী তিন জেলে হলেন- জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামের আলী আজগরের ছেলে ফখরুউদ্দিন (২৫), মো. দিলুর ছেলে মো. শাহারাজ উদ্দিন (২৭) ও কামাল উদ্দিনের ছেলে মো. কাউসার (২৭)।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাসান মাঝি দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মঙ্গলবার মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফিরলে তাকে দেখতে যান ফখরুউদ্দিন, শাহারাজ ও কাউসার। এতে ক্ষিপ্ত হন হাসান মাঝির প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে জসিম উদ্দিনের লোকজন তিন জেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।
একপর্যায়ে তারা তিন জেলের সামনে জাহাজের ছয়টি সিগন্যাল রকেট দিয়ে সেগুলোকে রকেট লাঞ্চার বলে তাদেরকে ডাকাত সাজিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে। পরে থানায় ডাকাত ধরা হয়েছে খবর দিয়ে তাদেরকে পুলিশে দেয়। মোবাইলে সেই ভিডিও ধারন করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জেলে কাউসারের মা জাহেরা খাতুন জানান, তার সন্তানসহ আটক তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো অভিযোগ কখনও আসেনি। তারা সব সময় নদীতে থাকেন। রাতে তাদের ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় বার বার অনেকের পায়ে ধরেও নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি বলে জানান জাহেরা।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাসান মাঝি বলেন, এখানে সরকারি ব্যারাকের অনেক মানুষ আমাকে দেখতে এসেছে। এর মধ্যে ব্যারাকে বসবাস করা তিন জেলেকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনার জন্য হাসান মাঝি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জসিম উদ্দিনকে দায়ী করেন।
এ নিয়ে জানতে চাইলে রাতে জসিম উদ্দিন মেম্বার বলেন, ‘হাসান মাঝি হত্যা মামলার আসামি। তারা সেখানে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল। তখন লোকজন ধরে তাদের পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে। তিনজনকে পুলিশ যখন ছেড়ে দিছে তখন নারীরা তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ক্ষিপ্ত হয়ে থানা ঘেরাও করে। এ ঘটনায় আমি কোনোভাবেই জড়িত না। অযথাই আমাকে এর সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে।’
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা বলেন, তিন জেলের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তারা ডাকাতি বা অন্যকোনো অপরাধে সাথে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের কাছ থেকে জাহাজের সিগন্যালে ব্যবহৃত ছয়টি রেড প্যারাসুট, সিগন্যাল রকেটকে রকেট লাঞ্চার বলে প্রচার করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় বুধবার বিকেলে ভুক্তভোগী জেলে মো. কউসার বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। খবর পেয়ে জসিম মেম্বারের লোকজন ৫০-৬০ জন নারী নিয়ে সন্ধ্যার দিকে থানা ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরে পুলিশ ও নৌবাহিনীর যৌথ টিম তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে রাহাত (২৩) ও সোহেল (২৫) নামে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে।