খাগড়াছড়ির চিরসবুজ বনে দেখা মিলেছে বিপন্ন প্রজাতির মুখপোড়া হনুমানের। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী এই প্রজাতির হনুমান বিপন্ন। এমন তথ্য দিচ্ছে আর্ন্তজাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ। মুখপোড়া হনুমানকে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন প্রাণী হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালার নিভৃত জনপদ মেরুং ইউনিয়নের এক পাহাড়ি গ্রামে মুখপোড়া হনুমানের দেখা পাওয়া যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা রবি কুমার চাকমা বলেন, ‘এখানে বিহার কেন্দ্রিক প্রায় একশ একরের প্রাকৃতিক বন রয়েছে। হনুমান, হরিণ, ধনেশ, ছলকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণী রয়েছে এখানে। ঘন বন হওয়ার কারণে সারা বছরই এদের বিচরণ থাকে। বিহার এলাকায় বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ থাকায় এখানে প্রাণীদের বিচরণ বেশি।’
মুখপোড়া হনুমানের ইংরেজি নাম ক্যাপড লিফ মাঙ্কি। এটি প্রাইমেট প্রজাতির একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। মুখপোড়া হনুমান বৃক্ষচারী প্রাণী। চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, ঘুম, খেলাধুলা, বিশ্রাম, প্রজনন– সবই গাছে সম্পন্ন করে। এরা মূলত গাছের কচি পাতা, বোঁটা, কুঁড়ি ও ফুল খায়। তবে বট, চালতা, আমড়া, আমলকী, হরিতকী, বহেরার ফলও বেশ পছন্দ।
পুরুষ মুখপোড়া হনুমানের শরীরের আকার ৬৮-৭০ সেন্টিমিটার। শরীরের তুলনায় লেজ লম্বা, দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৪ থেকে ১০৪ সেন্টিমিটার। স্ত্রী হনুমানের শরীর ৫৯ থেকে ৬৭ সেন্টিমিটার। লেজ প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার। পুরুষ হনুমানের ওজন ১৪ কেজি পর্যন্ত হয়। স্ত্রী হনুমানের ওজন প্রায় ১১ কেজি। দেহের চামড়া কালচে। পিঠ ও দেহের ওপরের লোম গাঢ় ধূসর-বাদামি এবং বুক-পেট ও দেহের নিচ লালচে, লালচে-বাদামি বা সোনালি। লোমবিহীন মুখমণ্ডল, কান, হাত ও পায়ের পাতা কুচকুচে কালো। মাথার চূড়া ও লেজের আগাও কালো।
খাগড়াছড়ির হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাথোয়াই মার্মা বলেন, ‘বাংলাদেশে যে তিন প্রজাতির হনুমান পাওয়া যায় তার মধ্যে মুখপোড়া হনুমানের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর বন ছাড়া এদের দেখা পাওয়া যায় না। মিশ্র চিরসবুজ বনে মাঝে মাঝে দেখা যায়। যেভাবে বন উজাড় হচ্ছে তাতে মুখপোড়া হনুমানের সংখ্যা কমছে। আবাসস্থল হারানোয় হনুমানসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী শঙ্কায় রয়েছে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে মুখপোড়া হনুমানের সংখ্যা কমে এসেছে। মুখপোড়া হনুমান দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। দলবদ্ধ এই প্রাণীদের একেকটি দলে সচরাচর ২ থেকে ১৪টি প্রাণী থাকে। দলের বয়োজ্যেষ্ঠ হনুমানই দলনেতা। তিনিই পুরো দলের নেতৃত্ব দেন। মুখপোড়া হনুমানসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষায় আমরা সচেনতামূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে মুখপোড়া হনুমানকে সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।