পরিবেশ আইন অমান্য করে খাগড়াছড়িতে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছে খোদ পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। পাহাড় কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসকের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও এমন ঘটনা ঘটেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাহাড় কাটা ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা।
সম্প্রতি ইনস্টিটিউটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কফি বাগানের সাথের পাহাড়ের একটি অংশ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। পাহাড় থেকে মাটি কাটার কাজে ব্যবহার হয়েছে পে–লোডার। পাহাড় কাটা মাটি ট্রলিতে করে নিয়ে গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন দাবি করে বলেন, ‘পাহাড় কাটা হচ্ছে না, বরং বর্ষায় ভেঙে পড়া পাহাড়ের মাটি সরিয়ে তা দিয়ে ইনস্টিটিউটের একটি নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে।’
তবে সরেজমিন পরিদর্শনে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে চলাচলের জন্য মাটির রাস্তা রয়েছে। রাস্তা থেকে মাটি সরানোর পাশাপাশি লম্বা পাহাড়ের বড় একটি অংশ কাটা হয়েছে। পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে নিচু জমি ভরাটের কাজ করা হয়েছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে জমি ভরাট করা হচ্ছে।’
এদিকে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বেপরোয়া পাহাড় কাটার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পরিবেশ সংগঠক ও পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল। তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কীভাবে পাহাড় কাটে? সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি এরকম উদাহরণ তৈরি করে তাহলে জনগণ কী করবে? বর্তমানে সময়ে পরিবেশ উপদেষ্টা, আমরা সবাই মিলে পাহাড় কাটা বন্ধে তৎপর রয়েছি। যেভাবে পাহাড়টি কাটা হয়ে বর্ষায় তা ভেঙে পরবে। এরই মধ্যে কোনো অজুহাতেই পাহাড় কাটার সুযোগ নেই। যারা পাহাড় কাটার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এদিকে পাহাড় কাটার ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসান আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাহাড়ের মাটি কাটার প্রমাণ পেয়েছি। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. হাসান মারুফ বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়টি জানার পরই আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্তের প্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। গত ৩ ফেব্রুয়ারি জেলায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার সভায় পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাহাড় কাটায় জড়িতদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’