পূর্বাঞ্চলীয় রেলের সব আন্তঃনগর ট্রেনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি এবং আন্তঃনগর মর্যাদায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা পথে একটি নতুন ট্রেন চালুর দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সম্মিলিত সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে দেওয়া এই স্মারকলিপিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দাবি মানতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওপর দিয়ে চলাচলকারী সব ট্রেন যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি রয়েছে।
মঙ্গলবার দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, রাজধানী থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং পুণ্যভূমি সিলেট যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এখানে প্রায় ৩৩ লাখ লোকের বসবাস। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স পাঠানো জনগণ এ জেলার বাসিন্দা। বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র তিতাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সার কারখানা, আন্তর্জাতিক নদীবন্দর আশুগঞ্জ, স্থলবন্দর আখাউড়াসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আয়ের জোগানদার এই জেলা। কিন্তু এখানকার মানুষকে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদায় দেখে রাষ্ট্র। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ব্রাহ্মণবাড়িয়া আগমন ও নির্গমন হয়ে থাকে। প্রবাসী ও চিকিৎসার্থে রাজধানীর সঙ্গে নিত্য যোগাযোগের ভোগান্তি কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারের নির্যাতনের থেকেও ভয়াবহ বলে মনে হয়। সর্বশেষ ভারতীয় ঋণে আশুগঞ্জ-আগরতলা চার লেন রাস্তার বেহাল দশায় অনেক প্রাণ ঝরে গেছে। সড়কপথে মাত্র একশত কিলোমিটার পেরিয়ে রাজধানীতে যেতে ন্যূনতম ৪ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। সহজতম ও স্বল্পসময়ে ঢাকা যাওয়া-আসার মাধ্যম রেলগাড়ি। কিন্তু এখানেও আমাদের জেলাবাসীর সঙ্গে করা হচ্ছে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রেলের সিট সংখ্যা কমিয়ে দেয়। নানা আন্দোলন সংগ্রামেও সিট বৃদ্ধি, গাড়ি যুক্ত করা, সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী, উপবন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ বা সোনার বাংলা, সদ্যযুক্ত কক্সবাজার অভিমুখী পর্যটক বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস, চট্টগাম থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার বিজয় এক্সপ্রেস কোনোটিরই স্টপেজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেওয়া হচ্ছে না। একটি কমিউটার ট্রেন থাকলেও সর্বনিম্ন মানের কোচ এবং গুটি কয়েক কোচ দিয়ে চালানোর ফলে তাতেও ভোগান্তির শেষ নেই।
স্মারকলিপিতে ঢাকা-সিলেট যাওয়া–আসার গাড়ি কালনী এবং উপবনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টপেজ, চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-কক্সবাজার পথে চলাচলকারী সকল ট্রেনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রা বিরতি, আন্তঃনগর মর্যাদায় একটি নতুন ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা পথে চালু করা, বর্তমানে চালু তিতাস কমিউটার ট্রেনের ভাঙা কোচ বাদ দিয়ে নতুন ১৬টি কোচ প্রদান, চট্টগাম–ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী বিজয় এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধি, টিকিট কাউন্টার সংখ্যা বৃদ্ধি, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ এবং আসনবিহীন টিকিট আনলিমিটেড (যত প্রয়োজন তত দেওয়া) করার দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে টিকিট বিক্রিতেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন সর্বোচ্চ আয় দিয়ে রেলের উন্নয়নে অংশীদার হিসেবে আছে। উল্লিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে নানান সময়ে প্রতিশ্রুতি, ঘোষণা, চিঠি চালাচালি, আন্দোলন, সংগ্রাম, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রভৃতি কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী শুধু আশ্বাসই পেয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যখনই আন্দোলন হয় তখনই মুলা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে আর তা বাস্তবায়ন হয় না। বিবৃতিদাতারা উল্লিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। অন্যথায় ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপর দিয়ে চলাচলকারী সব ট্রেন যাতায়াত সর্বসাধারণ জনতা বন্ধ করে দেবে বলে উল্লেখ করেছে তাঁরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলমের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিল– জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোবারক হোসেন আকন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন, জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দত্ত, সম্মিলিত সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের মো. ইব্রাহিম খান সাদাত, তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামিম আহমেদ, সদস্য খালেদা মুন্নি, জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক কাজী সিরাজুল ইসলাম সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।