লক্ষ্মীপুরে কয়েকটি ইউনিয়নে গত তিন দিন ধরে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডাকাত আতঙ্কে রাতভর এলাকায় এলাকায় পাহারা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো বাড়িতে ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের দাবি, এখন পর্যন্ত কোনো বাড়িতে ডাকাতি না হলেও ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, অনেক স্থানে ডাকাত ঢুকছে বলে মসজিদের মাইকিং করছে। এটি একটি গুজব। তারপরও নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। ডাকাত আতঙ্কিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া, মোহাম্মদনগর, লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী, জুগিরহাট, আবিরনগর, কুতুবপুর, ভবানীগঞ্জের আবদুল্লাপুর, ধর্মপুর, আলীপুর, চরভূতা ও আন্দারমানিক, কুশাখালীসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন গত মঙ্গলবার থেকে এখন পর্যন্ত রাতভর ডাকাত আতঙ্কে রয়েছে। রাতভর সর্বত্র ডাকাত আতঙ্কে পাড়ায় পড়ায় বাসিন্দারা লাঠিসোঁটা ও লাইট হাতে এলাকা পাহারায় দিতে দেখা যায়। পাশাপাশি মসজিদের মাইকে মাইকে ‘ডাকাত, ডাকাত’ বলে ঘোষণা দেয়। তার রেশ বৃহস্পতিবার রাতেও ছিল। ওইসব এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুব সমাজ পাহারা দিতে দিচ্ছে এমন কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এখনও পর্যন্ত কোনো ডাকাতির ঘটনা শোনা যায়নি। তবে কিছু কিছু জায়গায় ছোট ছোট চুরির ঘটনা ঘটেছে। আবার কেউ কেউ নাকি ডাকাত দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। তাই দ্রুত গ্রামের পর গ্রাম ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় মসজিদে মাইকিং হওয়ায় তা আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানায় তারা।
লাহারকান্দির পূর্ব রামানন্দী আমেনা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘স্থানীয়রা ডাকাতের খবর দেওয়ায় গত মঙ্গলবার মসজিদের মাইকিং করা হয়েছে। গত রাতেও চাঁদখালী বাজার সংলগ্ন এলাকায় একজন ব্যক্তি ৮-১০ জন লোককে একসাথে দেখতে পান। লাইট মারার সাথে সাথে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমাকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিতে বলে, আমি ঘোষণা না দিয়ে এলাকার কয়েকজনকে খবর দেই। এলাকার মানুষ রাত জেগে ডাকাত পাহারা দিয়েছেন।’
ভবানীগঞ্জের নুরুল ইসলাম ও আবু তালেবসহ কয়েকজন বলেন, ‘ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ড চুটকি সাকু এলাকার আসলাম মুন্সি বাড়ি প্রবাসী কফিলের ঘরের সামনে কে বা কারা চিরকুট রেখে যায়, তাতে লেখা ছিল ‘যদি পিছনের লাইট দেছ, তাহলে মারি হালাইওম’। এমন চিরকুটে ওই বাড়ির লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। এছাড়া চরমনসা, শরীফপুর, ধর্মপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে গত তিনদিন যাবত ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে, তবে এখনও কোন ডাকাত ধরা পড়েনি।’
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, ‘কয়েকটি এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, মসজিদে মাইকিংও হয়েছে। তবে কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। রাতেই টহল পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আতঙ্কিত এলাকাগুলো ঘুরে এসেছে। আমাদের পুলিশের রাতের টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। কোনোপ্রকার ডাকাতির ঘটনা যেন না ঘটে, আর জনমনে যেন এ বিষয়ে কোনো আতঙ্ক তৈরি না হয় সে বিষয়ে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।’
পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘ডাকাত আতঙ্কের গুজব তৈরি হয়েছে। বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। কারণ কোথাও কোনো ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। সাধারণ মানুষকে গুজবে কান না দিয়ে সবাই সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।’ এলাকায় অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখলে পুলিশকে জানাতে আহ্বান জানান তিনি।