নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুরে বসতি এলাকায় মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামের একটি ইটভাটায় পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো কালো ধোঁয়ায় আশপাশের লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে ইটভাটার মালিক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্টুর বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য রামপুরে বসতি এলাকায় ৩৫০টি পরিবার বসবাস করছে। এলাকাটিতে রয়েছে নানা জাতের অসংখ্য গাছপালা, কৃষিজমি, চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি মসজিদ। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে এলাকাটিতে প্রায় দুই একর জায়গার ওপর ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্টু ইটভাটা নির্মাণ করেন। ছিদ্দিক উল্যাহ এলাকায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার লোক হিসেবে পরিচিত।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে, ঢালে বা তৎসংলগ্ন আধা কিলোমিটারের মধ্যে সমতলে ইটভাটা স্থাপন অবৈধ। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
এর আগে লোকালয়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাটি বন্ধে স্থানীয় বাসিন্দা ইসমত আরা রুমা, আবু নাছের, লাল মিয়া ও মো.সেলিম জেলা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করার পর আব্দুল কাদের মির্জার চাপে তা তুলে নিতে বাধ্য হন তাঁরা। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম এ বছর বিষয়টি নিয়ে পুনরায় রিট পিটিশন দায়ের করেন। গত ৩ মার্চ দুই মাসের মধ্যে ভাটার কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সরজমিনে দেখা যায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ইট ভাটাটিতে যথারীতি কৃষি জমির মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার কালো ধোঁয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। ভাটা এলাকার ফসলহানি থেকে শুরু করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ভুট্টুর ইটভাটার কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অবৈধ এই ইটভাটা বন্ধে ২০১৭ সালে আমি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করি। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার হুমকিতে আমি ওই রিট পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হই। তা না হলে মির্জা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলত।’
অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মালিক ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্রু বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর ভাটার অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়ে বলছে- আপনারা চালান, আমরা কিছু বলব না। আদালতের স্টে অর্ডারের বিষয়টি শুনেছি।’
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, ‘মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং নামে ইট ভাটাটিকে শুরুর দিকে অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়ে ইট প্রস্তুতের জন্য বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তাদের পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরমধ্যে গত স্থানীয় এক ব্যক্তির রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ হাইকোর্ট দুই মাসের মধ্যে ভাটাটির সব কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
মিহির লাল সরদার বলেন, ‘৩০ মার্চ আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনাক্রমে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
এর আগে ভাটাটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল বলে জানান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং নামে ইট ভাটার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’