খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভুবন চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।
গত ১৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী অপহরণের শিকার হয়। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন– চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী অপহরণের এই ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) জড়িত। ইউপিডিএফ কর্তৃক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তীব্র নিন্দা এবং অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে। ওই শিক্ষার্থীরা বিজু উৎসব উপলক্ষে বন্ধুদের সাথে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যায়। বিজু শেষে গত ১৫ এপ্রিল তাঁরা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দিঘীনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসে। সেখানে গতকাল চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট না পাওয়ার কারণে খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছু দূরে কুকিছড়া নামক জায়গায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতে থাকেন। গতকাল ১৬ এপ্রিল সকালে কুকিছড়া থেকে টমটম গাড়ি করে খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় তাদের গাড়ি আটকানো হয় এবং চালক ও ৫ শিক্ষার্থীকে গিরিফুল থেকে এক অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে টমটম চালককে ছেড়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সারা বাংলাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের ওপর এমন ঘটনা আমাদের জন্য আত্মবিধ্বংসী কাজ। তাই আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা অপহৃত ৫ জন শিক্ষার্থীকে অতিদ্রুত নিঃশর্তভাবে সুস্থ শরীরে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি এবং এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যথাযথ প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, অপহরণের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এই ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সবসময় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের পক্ষে। কোনো মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘চবির ৫ শিক্ষার্থী অপহরণের বিষয়টি শুনেছি। আমরা মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’