সেকশন

শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

ফেনীতে মিতার মৃত্যু নিয়ে রহস্য, খোঁজ নেই হাসপাতালে আনা বন্ধুর

আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ১১:৪০ এএম

ফেনীতে কলেজশিক্ষার্থীর মিতা রানী নাথের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সেই রহস্য এখনও উদঘাটন করা যায়নি। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা বন্ধু অজয় সাহারও (২১) খোঁজ নেই।

গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় মিতাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান অজয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ঘণ্টা পর মারা যান তিনি।

নিহতের স্বজন, পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের সহদেবপুর এলাকার বাসিন্দা তপন লাল নাথের মেয়ে ফুলগাজী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মিতা রানী গত শনিবার বিকেলে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরে রাত ৯টা ১২ মিনিটে অজয় মিতার বড় বোন অপর্ণাকে ফোনকলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার কথা জানান। একইসঙ্গে তাঁকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার কথাও বলেন অজয়। পরে মিতার মৃত্যুর পরপরই সটকে পড়েন অজয়।

ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেদিন রাতে অজয়সহ আরও দুজন মিতাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তখন অজয় চিকিৎসককে মিতার বন্ধু পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার কথা জানান।

নিহতের বড় বোন অপর্ণা বলেন, ‘অজয়ের সঙ্গে মিতার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। সেদিন রাত ৮টা ৫২ মিনিটে মিতার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। তখন সে দ্রুত বাসায় ফিরছে বলে বাবাকে জানাতে বলেছিল। তারপর ৯টা ১২ মিনিটে অজয়ের নম্বর থেকে কল দিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানান। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমার ভাইকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে নিশাত নামে এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীসহ অজয় ছিল। একপর্যায়ে তারা আমার বোনকে হাসপাতালে রেখে সটকে পড়েন। আমরা চাই এসব ঘটনার সকল রহস্য বের হোক। সেদিন যদি দুর্ঘটনা হয়েও থাকে তাহলে দুর্ঘটনাস্থল কোথায় বা কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে আমরা জানতে চাই। এছাড়া অজয় যদি কোনো অপরাধ না করে থাকে তাহলে কেন পালিয়ে গেল? এজন্যই আমরা সন্দেহ করছি।’

এদিকে মিতার মৃত্যুর ঘটনায় গত সোমবার তাঁর বাবা তপন লাল নাথ বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে ফেনী পৌরসভার পশ্চিম মধুপুর এলাকার জয়ন্ত সাহার ছেলে ও ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অজয় সাহাকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার এজাহারে শহরতলীর লালপোলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অজয় সাহা মিতাকে নিয়ে মহাসড়কের লালপোল এলাকায় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় ছিটকে পড়ে মারা যান মিতা। এজন্য তাঁকে আসামি করে সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লিখিত ঘটনাস্থল ও দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে লালপোল ও খাইয়ারা এলাকার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদক। তবে কেউই এ ধরনের দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।

লালপোল এলাকার ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এখানে কাজ করি। সেদিন আশপাশে এমন কোনো দুর্ঘটনার তথ্য পাইনি। এছাড়াও এ সড়কে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা শুনতে পাই। সেদিন এমন কিছু কারও কাছে শুনিনি।’

খাইয়ারা এলাকার বাসিন্দা রিফাত হোসেন বলেন, ‘সেদিন আমাদের এলাকায় এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দেখে এলাকায় খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু কেউই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।’

অন্যদিকে ছেলের লাপাত্তা ও মিতার মৃত্যু নিয়ে কথা হয় অজয়ের বাবা ফেনী বড় বাজারের ব্যবসায়ী জয়ন্ত সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১৮ মে থেকে ফেনী কলেজে অজয়ের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ছিল। শনিবার বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যাওয়ার কথা বলে সে দোকান থেকে বের হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় ফিরে এক মেয়ে তার মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায়। তখন তার সঙ্গে নিশাত ছিল। পরবর্তী রাতে অজয় বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারপর এখনও আমাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ওর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।’

অজয়ের চাচা প্রশান্ত সাহা বলেন, ‘আমরা দুই ভাই শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। অজয় আমাদের চালের দোকানে বসত। এই সম্পর্কের বিষয়েও আমরা জানতাম না। কীভাবে কী হয়ে গেছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।’

মিতার বাবা তপন লাল বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়ে পুরো পরিবার বাকরুদ্ধ। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার মতো শক্তি নেই।’ 

দুর্ঘটনার পর অক্ষত রয়েছে অজয়ের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনসেদিন অজয়ের সঙ্গে হাসপাতালে যারা ছিলেন:
এদিকে মিতার মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে আলোচনায় আসে অভিযুক্ত অজয়ের সঙ্গে সেদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে যাওয়া অন্য দুজন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অজয়ের সঙ্গে সেদিন হাসপাতালে যাওয়া যুবকের নাম নিশাত চন্দ্র দাস। তিনি শহরের মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে একটি বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অজয়ের পার্শ্ববর্তী বাসা ও দোকানের সুবাদে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। একই সময় হাসপাতালে ছিলেন নিশাতের স্ত্রীও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিশাত চন্দ্র বলেন, ‘পরবর্তী বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাই। তখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অজয় একটি পিকআপ ভ্যানে মিতাকে নিয়ে অবস্থান করছিল। পরে হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সহযোগিতায় মিতাকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। একপর্যায়ে মিতার ভাইও সেখানে উপস্থিত হন। তারপর তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় নিয়ে যাই। এ সময়ে সার্বক্ষণিক আমার স্ত্রী মিতার পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে। তখনও মিতা কথা বলেছিল এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার কথা জানায়। একসময় আমার ব্যস্ততার কারণে সেখান থেকে অজয়সহ বাসায় ফিরে আসি।’

নিশাত চন্দ্র আরও বলেন, ‘অজয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলেও মিতার বিষয়ে তেমন জানাশোনা ছিল না। তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে জানতাম। সেদিন রাত থেকে অজয়ের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই। এখানে আমার বা স্ত্রীর কোনো কিছুই নেই। শুধু খবর পেয়ে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে স্বামী-স্ত্রী হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে দুই সঙ্গীকে নিয়ে লেখালেখি চলছে তাতে আমরা রীতিমতো বিব্রত।’

অজয়ের ছিল না মোটরসাইকেল:
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অজয়ের নিজের কোনো মোটরসাইকেল ছিল না। সেদিন বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নিশাত চন্দ্র দাসের মোটরসাইকেল নিয়ে যায় অজয়। ঘটনার পর মোটরসাইকেলটি অক্ষত অবস্থায় বর্তমানে নিশাতের কাছেই রয়েছে।

জানতে চাইলে নিশাত চন্দ্র দাস বলেন, ‘শখের বসে আমি মোটরসাইকেল কিনেছিলাম। কিন্তু অসুস্থতার জন্য মোটরসাইকেল চালানো হয় না। গাড়ির একটি চাবি আমার বাড়িওয়ালার ছেলের কাছে থাকত। শনিবার তার কাছ থেকেই অজয় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। সেদিন হাসপাতাল থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছি। গাড়ির সবকিছু আগের মতোই রয়েছে। একদম কোনো ধরনের দাগ বা ক্ষতিও হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিশাত চন্দ্র দাস বলেন, ‘অজয় আমার খুব কাছের ছোট ভাই। আমার পরিবারের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে আমাকে কল দিয়ে একটি মেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে জানায়। আমাকে দ্রুত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলেন। পথে জেল রোড পৌঁছালে আমার স্ত্রীর কল করে আবার বাসায় গিয়ে তাকে নিয়ে আসতে বলে। জানতে চাইলে অজয় তাকে (নিশাতের স্ত্রী) কল দিয়ে একটি জামা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে বলে জানায়।’

এ ব্যাপারে মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে টেনে কাটা পড়ে তিন যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।  নিহতরা হলেন—আরাফাত হোসেন, আনিস ও রিয়াজ। তাদের সবার বাড়ি...
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে টানা বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে দেশের সর্বোচ্চ ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।...
চাঁদপুরের কচুয়ায় ফসলি জমির মাঠ থেকে শতবর্ষী এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার রাগদৈল উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের ফসলি জমির মাঠের পানিতে অর্ধগলিত ভাসমান অবস্থায়...
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় বিদ্যুতায়িত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হরলাল পাল (৬৫) ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপুর...
রাতে ম্যাচ, তার আগে বিকেল বেলা ইউভেন্তুসের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের কয়েকজনকে দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলনে, ট্রাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। আর ট্রাম্প...
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনায় ইতি টানতে গত সপ্তাহে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বেশ কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তিনজন কূটনীতিকের বরাতে দিয়ে এ তথ্য...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.