সড়কের সামনে ফাঁকা, অথচ সড়ক আটকে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের পেছনে যানবাহনের লম্বা সারি। রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে এভাবেই প্রতিনিয়ত যাত্রী তুলছেন বাস চালকেরা। সড়ক আটকে আড়াআড়ি করে বাস রাখায় তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম যানজট।
চালকেরা চুক্তিভিত্তিক বাস চালাতে আগ্রহী হওয়ায় বাড়ছে বেপরোয়া গতির প্রবণতা। ট্রাফিক পুলিশের দাবি, যানজট নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই পরিবহন খাতে অরাজকতার মূল কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ বলছে, বিশ্বের ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০ শহরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির ঢাকা। বিশ্বব্যাংক ও বুয়েটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে ঢাকার সড়কে গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে।
বুয়েটের গবেষণা বলছে, ঢাকায় ৩৮৮ অনুমোদিত রুটে বিভিন্ন ধরনের ১৮ হাজার ৪৩১টি বাসের অনুমোদন আছে। এর মধ্যে চলছে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মালিকানায় এসব বাস।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ চালক নির্দিষ্ট বেতনে চাকরি করতে চান না। তারা চুক্তিভিত্তিক বাস চালানোয় বেশি যাত্রী নেওয়ার প্রতিযোগিতা ও কৃত্রিম যানজট তৈরি হচ্ছে।
ট্রান্স সিলভা পরিবহনের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, চালকেরা মনে করেন যদি সে মাসিক বেতন পায় তাহলে যেকোনো দুর্ঘটনা হলে সেই ক্ষতিপূরণ মালিক তাঁর বেতন থেকে কেটে রাখবে। এর জন্য মাসিক চুক্তিতে যেতে চান না তাঁরা। আমরা অনেক চেষ্টা করে দেখেছি, পারিনি।
ট্রাফিক পুলিশ বলছে, গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলা বন্ধে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আশ্বাস দিলেও পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) এস এম মেহেদি হাসান বলেন, সড়কে প্রতিবন্ধকতা রোধে মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। যারা প্রতিবন্ধকতা করেন তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হচ্ছে, জরিমানাও করা হচ্ছে।
আর যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সড়ক ব্যবস্থা বিজ্ঞানসম্মত না। যানজট ও বিশৃঙ্খলা থাকলে এর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিরা লাভবান হন। সেজন্য জনগণকে পরিবহন খাতের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ কম।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, পরিবহনের এই অবস্থার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্য শুধু পরিবহন মালিকেরা নয়। এখানে সরকারি কিছু কর্মকর্তা আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা আছে, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা আছে। এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
ঢাকার যানযট ও পরিবহনে অব্যবস্থা কারিগরি ইস্যু নয়, বরং রাজনৈতিক বলেও মন্তব্য করেন বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই সাবেক পরিচালক।