নেই রুট পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট। নেই চালকের লাইসেন্স, আবার অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় অপ্রাপ্তবয়স্করাই চালাচ্ছে। আর এভাবেই রাজধানীর সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিউম্যান হলার, যা লেগুনা নামেই বেশি পরিচিত। সড়কে আতঙ্ক ছড়ানো এসব লেগুনার রুট পারমিট দেওয়া অন্তত দুই বছর ধরে বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), করছে না নবায়নও। তবুও প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়ে চলছে এসব লেগুনা।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে দেদারসে সড়ক দাপিয়ে চলছে লক্কড়-ঝক্কড় এসব লেগুনা।
হিউম্যান হলার বা লেগুনার নামে রাজধানীর ১৪টি রুটে চলে লক্কড়-ঝক্কড় অন্তত ৯০০ গাড়ি। কোনটির দরজা দড়ি দিয়ে বাঁধা, নেই লুকিং গ্লাস ও জানালার কাচ। ময়লা-ভাঙাচোরা সিট। নেই মানসম্মত হেডলাইটও। স্টার্ট দেওয়ার সুইচ নেই, দুই তারে ঘষা দিয়েই চলছে এসব লেগুনা। কিছু লেগুনায় আবার হর্নও নেই, হাত দিয়ে গাড়ির শরীরে আঘাত করে জানান দেওয়া হচ্ছে নিজের অস্তিত্ব। এমন গাড়ির নতুন পারমিট দেওয়া হয় না দুই বছর ধরে, বন্ধ নবায়নও। ফলে ঠিক কত গাড়ি চলে তার হিসেব জানে না কেউ।
ফিটনেসহীন এসব গাড়ির মালিকেরা বেশি ভাড়ার লোভে বাড়তি সিট বসিয়ে তুলছেন বেশি যাত্রী। ১০ সিটের গাড়িতে নেওয়া হচ্ছে ১৫ জন পর্যন্ত। করোনার সময়ে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার নিয়ম করলে, ১৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকা করা হয়। করোনার ভয়াবহতা শেষ হওয়ার প্রায় তিন বছর পরও বাড়তি ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।
এসব লেগুনার চালকেরা বলছেন, গাড়ির কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্সও থাকে মালিক সমিতির কাছে। পুলিশ আমাদের গাড়ি সেভাবে তল্লাশি করে না। সেজন্য কাগজপত্র লাগে না। সাথে কাগজপত্র রাখলে বেশিরভাগই হারিয়ে যায়।
বেশিরভাগেরই যানবাহন চালানোর লাইসেন্স না থাকলেও এসব গাড়িচালকদের দাবি, ‘ওস্তাদের কাছে শিখেই দক্ষ হয়েছেন তারা।’
অভিযোগ রয়েছে, গাড়িপ্রতি দিনে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে এসব গাড়ি চলে। লাইন খরচ নাম দিয়ে চাঁদা তোলেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, ‘চাঁদাবাজি যেই করুক কেউই তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়। চাঁদা নিয়ে লেগুনা চলাচলের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
কীভাবে এসব অবৈধ যানবাহন চলছে তা জানে না বিআরটিএ। এগুলো বন্ধে নেই তেমন কোনো উদ্যোগও।
বিআরটিএ পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ট্যাক্স টোকেন থাকতে হবে, থাকতে হবে রুট পারমিট। এসব কাগজপত্র ছাড়া যেসব গাড়ি চলে সেসব অবৈধ। এসব কাগজপত্র ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না।
রিকশায় ৮০ থেকে ১০০ টাকার গন্তব্যে যেতে লেগুনায় ভাড়া লাগে ২০ টাকা। সেজন্য বাধ্য হয়ে এ বাহনে ওঠেন অনেকেই।