বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারিক আদালতের রায় আজ রোববার বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ফলে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থী বলছেন, রায়ে সন্তুষ্ট তারা, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর, বিচারিক আদালত ছাত্রলীগের ২০ জন সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। সম্প্রতি, এই মামলায় হাইকোর্ট ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এই রায় ঘোষণা করেন। আমরা, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, এই রায়ে সন্তুষ্ট এবং দাবি করছি, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমির পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘৫ আগস্টের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমির পলায়ন আমাদের হতভম্ব করেছে। মুনতাসির আল জেমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আবরার ফাহাদ হত্যায় তাঁর ভূমিকার জন্য বিচারিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। ফাঁসির আসামিদের স্থান হওয়ার কথা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে আবৃত কনডেম সেলে। সেখান থেকে এত শীর্ষ সন্ত্রাসীর পলায়ন ন্যক্কারজনক এবং আমাদের জন্য লজ্জার। এই পলায়ন শহীদ আবরার ফাহাদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত খুনি মুনতাসির আল জেমিসহ বাকি সকল পলাতক আসামিকে খুঁজে বের করে আটক করতে হবে। পাশাপাশি, জেমির পলায়নকার্যে সহযোগিতাকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নিজেদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।’
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ‘আমরা আরও স্পষ্ট করে বলতে চাই, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে কোনো ধরনের সহিংসতা, অনাচার বা অপকর্মের স্থান নেই। আমরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর অবস্থান নিয়েছি, তেমনি কোনো ছাত্র সংগঠনই যেন ছাত্ররাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে সহিংসতা বা অনিয়মের আশ্রয় না নেয়, সে বিষয়ে আমরা সজাগ থাকব। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে কোনো অপকর্মের সুযোগ দেওয়া হবে না। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে, গোপনে বা ছত্রছায়ায় কোনো ধরনের ছাত্ররাজনীতি বুয়েট ক্যাম্পাসে চাই না। আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও জ্ঞানচর্চার পরিবেশ। আমরা সকল ছাত্র সংগঠন ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা ক্যাম্পাসে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করে।’