টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারের চার শতাধিক বই ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর আগে পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এর পরই প্রশাসন বই ফেরতের উদ্যোগ নেয়।
গতকাল রোববার রাত ৯টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল বইপুস্তক পাঠাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পাঠাগারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন মাহমুদের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ হল রুমে টানা দুই ঘণ্টাব্যাপী সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়েম ইমরান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম শহিদুল্লাহ, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খায়রুল মুন্সি, উপজেলা জামায়াতের আমির মিজানুর রহমান, অভয়ারণ্য পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র, সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ, ইসলামী খেলাফত মজলিশের নেতা গোলাম রব্বানী এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। বৈঠকে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত বই বা নাস্তিক্যবাদ প্রচারের বই পুস্তক পাওয়া যায়নি।
এর আগে, গত ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে বাঁশহাটি মহল্লার ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারের চার শতাধিক বই লুট এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঠাগার বন্ধ করা হয়।
অভয়ারণ্য পাঠাগারের সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। পাঠাগার একটি পবিত্র স্থান। জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধর্ম চর্চার জন্য সব ধরনের বইয়ের সমাহার থাকবে। উনারা আমাদের লুট হওয়া চার থেকে পাঁচ বস্তা বই ফেরত দিয়েছেন।’
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন মাহমুদ বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। সভায় উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে পাশাপাশি থেকে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পরে অভয়ারণ্য পাঠাগারে গিয়ে সকলের উপস্থিতিতে বইগুলো কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইসলামী যুব খেলাফত মজলিশ ধনবাড়ী উপজেলা শাখার নেতা গোলাম রব্বানী কয়েক দিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘোষণা দেন, ধনবাড়ী ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগার নাস্তিকদের কারখানা। সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত বই পুস্তক রয়েছে। এ পাঠাগারকে উচ্ছেদ করা হবে। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একদল যুবক পাঠাগারে প্রবেশ করে পাঠকদের ধমকিয়ে বের করে দেয়। পরে আলমারি থেকে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নজরুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ, ড. জাফর ইকবালসহ দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাঁচ শতাধিক বই বস্তাবন্দী করে নিয়ে যায়। পরে এসব বস্তাবন্দী বই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে রেখে চলে যায়।