রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে সংরক্ষিত ১৪৪ একর বনভূমি নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এখানে শাল গাছসহ দেশীয় বনজ, ফলদ গাছ রোপণ হবে। প্রাণীদের জন্য থাকবে চারণ ভূমি। বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলছেন, এই বনে ৪৪ জন দখলদার আছে। তাদের রাজউকের মাধ্যমে সরানো হবে। আর বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলছেন, পূর্বাচলের শালবন, মেছো বিড়ালসহ বেশ কিছু স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও পাখির জন্য সংরক্ষিত করা সম্ভব।
এক সময় শাল-গজারি বনের বিস্তার ছিল উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত। অথচ গৌড় এলাকার সবশেষ শালবন টিকে আছে রাজধানীর পাশে পূর্বাচলে। সেখানেও আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক।
শালবন রক্ষায় ১৪৪ একর বনভূমি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পের ২৪ ও ২৫ নম্বর সেক্টরে শাল, হিজল, বরুণসহ দেশি ফলদ, বনজ ও ওষুধি গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কথা জানান উপদেষ্টা।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কিছু জায়গা তো ফাঁকা রাখতে হবে যেখানে পশুপাখিরা আসবে, তাদের চারণক্ষেত্র। আর অন্য যে জায়গাটুকু ফাঁকা আছে সেখানে আমরা অ্যাসিস্ট করব, প্রাকৃতিক উপায়ে যাতে শালটা ফেরত আসে। জায়গা যদি আমি ফাঁকা রেখে দিই তাহলে বে–দখল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।’
বনভূমি-জলাশয় ঘিরে, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, উভয়চর প্রাণী, পাখি ও কীটপতঙ্গের বাস। আবাসন প্রকল্পের বাহিরের এ বনভূমি রক্ষা করা জরুরি।
বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, ‘আশির দশকে কাপাসিয়া থেকে একটি হার উদ্ধার হয়। সেটা প্রমাণিত হয়েছে যে একশৃঙ্গ গন্ডারের। মানে ডেফিনেটলি শত বছর আগে এই বনে গন্ডার, বাঘ, হাতি সবই ছিল। এখানে সবচেয়ে বড় যে প্রাণীটা খাদক প্রাণী হবে সেটা হলো মেছো বিড়াল, যেটাকে ভুল করে অনেকেই মেছো বাঘ বলে থাকে।’
তবে শালবনের ভেতরে আছে ৪৪ জন অবৈধ দখলদার। রাজউকের মাধ্যমে পুনর্বাসনের কথাও জানান উপদেষ্টা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বন এলাকাটা আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা না। আর এখানে বংশ পরম্পরায় মানুষ নেই যে তারা প্রথাগত বনবাসী। তারা হয়ত জায়গা খালি দেখে এসে ঢুকে পড়েছেন কিংবা তাদেরকে কেউ ঢুকিয়ে দিয়ে ভাড়া তুলছেন। প্রথাগত বনবাসী না হলে তো এখানে থাকার সুযোগ নেই। যারা আছেন তাদেরকে আমরা অবৈধ দখলদার বলেই বিবেচনা করব এবং তাদের অবশ্যই সরে যেতে হবে।’
২০২৩ সালে শালবনের ১৪৪ একর জায়গা, রাজউকের কাছ থেকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। এ বছর এলাকাটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়।