খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু এবং ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বর্জন করে শিক্ষার্থীরা জানান, তারা তাদের ছয় দফা দাবি থেকে সরে এসে উপচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেছেন। আবাসিক হলগুলোর তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন।
গতকাল সোমবার রাতে সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় এবং আগামী ৪ মে ক্যাম্পাসের একাডেমিক কার্যক্রম চালু ও ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত বর্জন করে। এটিকে প্রহসন বলছেন শিক্ষার্থীরা। পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে উপচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়েছেন তারা এবং ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের সাথে কোনো প্রকার সহানুভূতি দেখায়নি প্রশাসন। তারা গত তিন দিন ধরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। কেউ তাদের সাথে দেখা করতে আসেননি। গতকাল সিন্ডিকেট সভায় তারা ভেবেছিলেন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে এক থেকে সিদ্ধান্ত নেবে কিন্তু তারা সেটা করেনি।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এই ৩৭ জনের ভেতর যারা হামলার শিকার হয়েছে, আহত হয়েছে এমন সাধারণ শিক্ষার্থীও রয়েছে। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলে তারা তা মেনে নেবে না। তারা ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্ররাজনীতি চান না। কিন্তু তারা মনে করছে প্রশাসন ক্যাম্পাসে রাজনীতি প্রবেশ করাতে চায়।
মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা দূর্জয় বাংলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তখন তারা ‘আমার ঘর আমার হল খুলতে খুলতে হবে’, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মানি না মানবো না’, ‘দালালী না রাজপথ, রাজপথ, রাজপথ’ ও ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’—স্লোগান দেয়। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সামনে গিয়ে শিক্ষকদের তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানান। তারপর তারা ডিএসডাব্লু ভবনের নিচে এসে একদফা দাবি, উপচার্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তারা প্রথমে খানজাহান আলী হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করে, পরবর্তীতে ডা. এমএ রশীদ হল, শহীদ স্মৃতি হলসহ ছয়টি হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ বিষয়ে উপচার্য ড. মুহাম্মদ মাছুদ আলম বলেন, ‘ছাত্রদের কোনো বিষয়ে আমি জোর করি না। হল ভাঙার বিষয়টি বেআইনি হবে। এ বিষয়টি পরবর্তীতে সিন্ডিকেটকে জানানো হবে। সিন্ডিকেট পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংঘর্ষের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে কুয়েট প্রশাসন। এছাড়াও ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনের নামে মামলা করে কুয়েট প্রশাসন। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কুয়েটের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় সিন্ডিকেট। পরে ১০ এপ্রিল ২২ জন শিক্ষার্থীর নামে মামলা করেছে মো. হোচেন আলী নামে এক ব্যক্তি।