কুষ্টিয়ায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের এই অভিযোগ মীমাংসা করতে গ্রামে সালিস বৈঠকের আয়োজন করে গ্রামের মাতবররা। এদের মধ্যে সমাজপ্রধান রহিম মন্ডল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিউর রহমান লিটন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে চড়-থাপ্পড় মেরে মীমাংসা করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
ঘটনার দুদিন পর শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। তবে গ্রাম্য মাতবরদের দাবি, এ ঘটনায় বারবার আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও এড়িয়ে গেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায় পাঁচ বছরের শিশু মেয়েটি শুয়ে আছে। তার পাশেই বাবা-মা বসে রয়েছেন। এসময় শিশুটির মায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন সকাল ৯টার দিকে আমি আমার মাকে বাড়িতে এগিয়ে দিতে গেছিলাম। এই সুযোগে বিশা নামে সম্পর্কে এক প্রতিবেশী দাদা মেয়েকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে মেয়ে ওই বাড়ি থেকে খুঁড়াতে খুঁড়াতে আসতে দেখে সন্দেহ হয়। এসময় কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে বিশা দাদা আমার সাথে খারাপ কাজ করেছে। বিষয়টি গ্রামের মুরুব্বিদের জানালে তারা পরেরদিন (বৃহস্পতিবার) রাতে বাড়ির ওপর সালিস বসায়। সালিসে বিশাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে মাতবররা বলে যে সালিস শেষ। এর পরেরদিন (শুক্রবার) মেয়ে পেট ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি।’
মামলা করতে কেউ বাধা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে শিশুটির মা প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে থানায় যায়নি। মেম্বর ও সমাজপ্রধান বলেছেন, আগে চিকিৎসা নিয়ে আসো তারপর মামলা করতে সহযোগিতা করবে। আমিও মামলা করব।’
সালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিউর রহমান লিটন হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা করতে বলেছিলাম। তারা যায়নি। তবে সালিসে চড়-থাপ্পড় মেরে মীমাংসা করেছিল অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাই-ভাতিজারা। আমি শুধু উপস্থিত ছিলাম।’
এ ঘটনায় সমাজপ্রধান রহিম মন্ডল বলেন, ‘সামাজিকভাবে আমরা একটা মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। সেখানে অভিযুক্তকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছিল।’
ধর্ষণের মতো ঘটনা বিচার সালিস করে সমাধান করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে রহিম মন্ডল বলেন, ‘আমি তাদেরকে মামলাও করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা তা করেননি। আমি সবসময় শিশুটির খবর রাখছি।’
জানা গেছে, বিশা একই গ্রামের মৃত হরার ছেলে। বেশ কয়েকবছর আগে স্ত্রী মারা যাবার পর সন্তানদের সাথে একই বাড়িতে থাকতেন তিনি। ঘটনা জানাজানির পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন বিশা। তবে এ বিষয়ে তার পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, ‘শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
পাটিকাবাড়ি ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরনবী বলেন, ‘ওসি স্যারের নির্দেশে শিশু মেয়েটিকে হাসপাতালে দেখে এসেছি। চিকিৎসা শেষে পরিবারকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’