জরাজীর্ণ তিস্তা রেল সেতুর ওপর দিয়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম, বুড়িমারী ও লালমনিরহাট, আন্তঃনগরসহ ১২টি রুটে প্রতিদিন ২২টি ট্রেন চলাচল করছে। রেলওয়ের হিসেব অনুযায়ী, ১ শ ৯০ বছর বয়স রেল সেতুটির। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ৯০ বছর আগে। মেয়াদোত্তীর্ণ এ সেতুটির ওপর দিয়ে চলছে ২২টি ট্রেন। যাত্রীরাও ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে ঢাকা-রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া ও নাটেরসহ আটটি জেলায়।
বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা নদীর ওপর ১৮৩৪ সালে নির্মাণ করা হয় ২ হাজার এক শ ১০ ফুট লম্বা রেল সেতু। নির্মাণের সময় যার মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল এক শ বছর। তবে ৯০ বছর আগেই এর মেয়াদ হিসেব অনুযায়ী শেষ হয়ে গেছে। এর ফলে সেতুটির কাঠের পাতগুলো ভেঙে গেছে, কোথাও নাট খুলে পড়ছে।
কাউনিয়া উপজেলার স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম ও শামিম আহমেদ বলছেন, সীমান্তবর্তী লালমনিহাট ও কুড়িগ্রামের ট্রেন রংপুর হয়ে ঢাকায় চলাচল করছে এই সেতুর ওপর দিয়ে। সেতুর অনেক স্থান ভেঙে পড়ছে। এর পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলে চলাচল করছে তিন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রংপুর-ঢাকা রুটে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হলেও তখন থেকে সংস্কারের মুখ দেখেনি এ সেতুটি। তবে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে মেরামতসহ সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।
রংপুর রেল স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী জানান, রেল কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এর অনেক অংশে কাঠগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, নাটগুলো খারাপ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলাচল করছে ২২টি ট্রেন। তবে অতিদ্রুত সেতুটির সংস্কারের ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
শংকর গাঙ্গুলী আরও জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য একটি সেতু থেকে স্প্যান, গার্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে ১৯৭২ সালে তা মেরামত করা হয় এবং সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেল সেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাইফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করেন।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘রেল সেতুটির বিষয় গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। রেল সেতুর নিচে বালি তোলার বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলার নিবার্হীকে বলা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আর রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে কথা হয়েছে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেল চলাচলে সমস্যা বা জটিলতা হবে না।’
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, ১ হাজার ২ শ ২১টি কাঠের স্লিপার রয়েছে এই তিস্তা সেতুতে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ শ স্লিপার নষ্ট হওয়ার ফলে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকি স্লিপারগুলো পরির্বতনের জন্য রেল অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এর বরাদ্দ আসলেই নষ্ট হওয়া স্লিপারগুলো পরিবর্তন করা হবে।