শরিয়াহভিত্তিক আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখাটিতে ক্যাশ টাকা সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা। প্রতিদিন গ্রাহকরা টাকা তুলতে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন খালি হাতে। ফলে, উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে।
ব্যাংক কর্মকর্তা বলছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা অসহায়। ব্যাংকে ক্যাশ টাকা না থাকায় চাহিদানুযায়ী সেবা দিতে পারছেন না তারা। গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরার কথা বলছেন তারা। তবে, গত সপ্তাহে গ্রাহকদের বলা হয়েছিলো রোববাব থেকে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে।
মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোডে অবস্থিত আইসিবি ইসলামি ব্যাংকে বুধবার সরেজমিনে গিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত রমজান মাস থেকে আইসিবি ব্যাংকে ক্যাশ টাকা উত্তোলনে সমস্যা হচ্ছে। সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকার বেশি উত্তোলন করতে পারছেন না গ্রাহকরা। কাউকে ৫ হাজার কারো হাতে ১০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ফলে, যেসব গ্রাহকরা ব্যবসায়িক বা অন্যান্য কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা তুলতে আসছেন তাদেরকে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডাও হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রাহকদের।
গতকাল (মঙ্গলবার) টাকা উত্তোলনের চাহিদাপত্র ৯৫টি চেক জমা হয় ব্যাংকে। তার বিপরীতে মাত্র প্রায় ৪ লাখ টাকা গ্রাহকদের দিতে পেরেছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। যেখানে চাহিদা ছিলো ২০ লাখের বেশি টাকা।
ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে এসেছেন প্রবাসী লিমন আহমদ বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে ব্যাংকে আমার একাউন্টে টাকা জমা রাখছিলাম। এখন দেশে আসছি, ঈদের পর থেকে তাঁরা (ব্যাংক কর্মকর্তা) আমাকে টাকা দিতে পারছে না৷ ২ লাখ টাকার চেক দিয়েছি তারা ১০ হাজার টাকা দিয়ে বলতেছে কিছু দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’
আরেক গ্রাহক চেরাগ আলী জানান, গত কয়েক দিন ধরে তাঁরা (ব্যাংক কর্মকর্তা) কাল পরশু করে তারিখ করছে। বলছিলো গত রোববার থেকে ব্যাংকে টাকা আসবে৷ কিন্তু আজ বুধবার চলে যাচ্ছে টাকা আসেনি৷ নিজের একাউন্টে টাকা রেখে সময়মতো পাচ্ছি না৷ গত একমাস ধরে তাঁরা আমার সাথে এমন করছে৷
একই ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছে বিষ্ণু দেব নামের একজন গ্রাহক। তিনি ষোলো লাখ টাকা উত্তোলন করতে এসেও তুলতে পারেন নি। ব্যাংক কর্মকর্তারা তাঁকেও সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা তোলার জন্য বলেন। কিন্তু, দশ হাজার টাকায় তাঁর কিছুই হবে না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারে আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত এক মাস ধরে আমাদের ব্যাংকে টাকা ছাড় পাচ্ছি না৷ তাই গ্রাহকদের সমস্যা হচ্ছে। মালিক পক্ষ চেষ্টা করছে এই সমস্যা সমাধানের। দ্রুতই এই সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে গ্রাহকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত টাকা পাবেন৷’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার চাহিদা রয়েছে৷ প্রতিদিন যে চেক আসছে তার বিপরীতে ৫-১০ হাজার টাকা করে ছাড় দিচ্ছে হেড অফিস৷ আমরা গ্রাহকদের এর থেকে বেশি সেবা দিতে পারছি না৷’
কেন্দ্র থেকে ব্যাংকের এই শাখায় টাকা না পাঠানোয় এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তবে, এই সমস্যা সাময়িক, সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে গড়ে ওঠে শরিয়াহভিত্তিক আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটি লোকসানে আছে এবং ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটির ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে ৭৯০ কোটি ৪ লাখ টাকা বিতরণ করা ঋণের (বিনিয়োগ) ৮৭ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একীভূতকরণের তালিকায় রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, কারণ তারল্য সংকটে ধুঁকছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটি।