সুরক্ষিত গুদাম থেকে স্বর্ণ চুরি জানাজানি হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ধামাচাপার সুযোগ দেয় ঢাকা কাস্টম হাউস। দুই অতিরিক্ত ও দুই যুগ্ম কমিশনারের নির্দেশে, ৮০ লাখ টাকার স্বর্ণ কিনে গুদামে জমা দেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এআরও শহিদুল ও সাইদুল। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
গত বছরের ৬ আগস্ট বিমানবন্দরে কাস্টমসের মূল্যবান পণ্যের সুরক্ষিত গুদামের দায়িত্ব পান এআরও মাসুম রানা ও আকরাম শেখ। ১৭ আগস্ট তাঁরা আগের এআরও শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম শাহেদের কাছ থেকে চাবি বুঝে নেন। মালামাল বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ছয়টি আটক নথি-ডিএমের স্বর্ণ দিতে পারেনি শহিদুল ও সাইদুল।
বহু খুঁজেও স্বর্ণ পাওয়া না গেলে বিষয়টি যুগ্ম কমিশনার মিনহাজকে জানায় মাসুম ও আকরাম। পরদিন চার রাজস্ব কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠক করে ঢাকা কাস্টম হাউস। দুই দিনের মধ্যে স্বর্ণ ফেরত দিতে শহিদুল ও সাইদুলকে চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। পরে এডিসি ফরিদ উদ্দিন ও মশিউর রহমান, যুগ্ম কমিশনার ইমতিয়াজ ও মিনহাজের পরামর্শে স্বর্ণ কেনার উদ্যোগ নেন শহিদুল ও সাইদুল। আজিজ নামের এক ব্যক্তিকে ধরেন তারা। দুজনে ৪০ লাখ করে মোট আশি লাখ টাকা দেন।
২৩ আগস্ট আজিজ স্বর্ণ নিয়ে বিমানবন্দরে আসেন। এভিয়েশন সিকিউরিটির এক কর্মী স্বর্ণ পৌঁছে দেন শহিদুলের কাছে। যুগ্ম কমিশনার ইমতিয়াজ ও মিনহাজ এবং ডেপুটি কমিশনার সেগুফতা মেহজাবিনের উপস্থিতিতে স্বর্ণ জমা হয় গুদামে।
পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, হারানো স্বর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টের তথ্য পেয়েছে পিবিআই। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে লেনদেনের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। যদিও তদন্তে নাম আসা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পিবিআই।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, চুরি হওয়া স্বর্ণ বাজার থেকে কিনে যদি পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে, এটি সম্পূর্ণভাবে অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। এই কাজের সঙ্গে জড়িত সকলকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে প্রায় ৫৬ কেজি স্বর্ণ লুটের ঘটনায় গত সেপ্টেম্বরে মামলা হয় বিমানবন্দর থানায়।