তিতাসের ৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকার প্রি-পেইড মিটার প্রকল্পে যন্ত্রপাতির দাম ধরা হয়েছে বাজারদরের চেয়ে ২ থেকে ৬ গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর যোগসাজশেই অতিরিক্ত ব্যয়ের এই হিসাব। যদিও প্রকল্প পরিচালক দাবি করছেন, প্রতিযোগিতামূলক নিলামে যৌক্তিক দামেই হবে কেনাকাটা।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১১ লাখ আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে সাড়ে ৬ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনে তিতাসের দুই প্রকল্প চলমান। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে একনেকে অনুমোদন হওয়া মোট ৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প দুটির কেনাকাটার দরপত্রের প্রস্তুতি চলছে।
জাইকার অর্থায়নে আগের প্রকল্পে মিটারের দাম ছিল ১৭ হাজার টাকা। যার সঙ্গে যন্ত্রপাতি ও সংযোজনে গ্রাহকের ব্যয় ছিল দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এবারের প্রকল্পে মিটারপ্রতি মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার টাকা।
তিতাস স্মার্ট মিটারিং প্রজেক্টের (এডিবি ফাইন্যান্সড) প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ আবুল কাওছার বলেন, ‘১৫ হাজারের কিছু বেশি টাকা দাম ধরা আছে মিটারে। বাকি খরচ যাবে মিটার লাগানোর ক্ষেত্রে। যেখানে মিটার লাগাতে গ্রাহককে কোনো আর্থিক লেনদেন করতে হবে না। এ কারণে আপাত দৃষ্টিতে খরচ আগের প্রজেক্টের চেয়ে বেশি লাগছে।’
আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লেসে দেখা যায়, গ্যাসের স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের দাম ৩০ থেকে ৬০ ডলারের মধ্যে। এছাড়া বল ভাল্ব, রেগুলেটরের দাম পড়ে ২ থেকে ৪ ডলার। তিতাসের প্রকল্পে এসব যন্ত্রাংশের দাম ধরা হয়েছে কয়েকগুণ বেশি।
বিইআরসির সাবেক সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চোধুরী বলেন, ‘হাউজ হোল্ড গ্যাস মিটারের দাম ৩৫ থেকে ৫০ ডলারের বেশি না। এখন আপনি যদি মানুষকে এভাবে চুরি করার সুযোগ দেন, ডাকাতি করার সুযোগ দেন, আপনি যদি এখানে না তাকায় দেখেন তাহলে এগুলো চলতেই থাকবে। এগুলোর সঙ্গে বিদেশিরাও জড়িত, আমাদের লোকজনও জড়িত।’
বেসরকারিখাতে প্রিপেইড মিটার আমদানি ও খোলাবাজারে বিক্রির সুযোগ দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতির সুযোগ নিতেই মিটারের স্পেশিফিকেশনে জটিলতা আনা হয়। যার ইঙ্গিত মেলে প্রকল্প পরিচালকের কথাতেও।
ভিডিও দেখুন:
মুহাম্মদ আবুল কাওছার বলেন, ‘অনলাইন মার্কেট প্লেস থেকে খুঁজে আমাদের আনা মিটারের দাম পাবেন না। হয় এনএফসি কার্ড ভিত্তিক বা সিম ভিত্তিক পাওয়া যায়।’মকবুল-ই-ইলাহী চোধুরী বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার কিনতে এমন একটি স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়েছে যা জাপানের কোনো কোম্পানির কাছে নেই। একটাই মাত্র কোম্পানি করছে, ওই দামেই আমাদের কিনতে হয়েছে।’
প্রিপেইড মিটার স্থাপনের দুই প্রকল্পে ৪৫ মাসের জন্য ১৬টি গাড়ি ভাড়ায় ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে এমন অতিরিক্ত ব্যয়ের ফলে নতুন গ্রাহকদের গুণতে হতে পারে বাড়তি মিটার ভাড়া।