বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও, অর্থ উদ্ধারে নেই কোনো অগ্রগতি। চুরির বছরই মাত্র ৩৫ শতাংশ অর্থ ফেরত পেয়েছিল বাংলাদেশ। বাকি অর্থ ফেরত পেতে এখনো মামলা চলছে ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে। মামলা পরিচালনায় বছরের পর বছর মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও, ফেরত পাওয়া নিয়ে আছে সংশয়।
২০১৬ সালে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় নেয়া দুই কোটি ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। আর ফিলিপাইনে নেয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। অর্থাৎ চুরি যাওয়া রিজার্ভ থেকে ফেরত এসেছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।
শুরুর দিকে অর্থ ফেরতে ফিলিপাইন সরকারের জোর তৎপরতা ছিল। পরে তা থেমে যায়। এখন পর্যন্ত একটি মামলারও রায় হয়নি। অর্থ ফেরত এবং দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ। এতে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক, ক্যাসিনো মালিক কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ২০২০ সালের মার্চে কোর্ট জানিয়ে দেন, মামলাটি তাদের এখতিয়ারে নেই। ওই বছরের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়।
মামলার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিবাদীদের নোটিশ দেয়া হয়। এরপর আরসিবিসি, অভিযুক্ত ব্যক্তি, সোলায়ের ক্যাসিনো, ইস্টার্ন হাওয়ায়ে এবং কিম অং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করে।
এদিকে, অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সরকার গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর বা কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। এ ঘটনায় সিআইডির তদন্তপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার কথাও বলা হয় টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে।
অর্থ উদ্ধারের মামলায় ফিলিপাইনের আদালত থেকে কোনো রায় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে আদৌ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে, নাকি মামলা পরিচালনায় বছরের পর বছর শুধু অর্থ খরচ করতে হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে, এ বিষয়ে মামলা চলমান থাকায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।