আদালত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নির্দেশনা নেই। তবু খেলাপি ঋণ আদায়ে গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান ও বাসার সামনে দলবল নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে কয়েকটি ব্যাংক। মাইকিং করে ধারাবাহিকভাবে ঋণের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে জনসমক্ষে। যা ব্যাংকার বহিঃসাক্ষ্য আইনের পরিপন্থি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি গ্রাহকদের সামাজিকভাবে হেয় করার শামিল। এতে ঋণ আদায়ের চেয়ে ব্যাংক ও গ্রাহকের দূরত্ব আরও বাড়বে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে বেশ কিছুদিন ধরেই গ্রাহকের বাড়ি এবং অফিসে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ঋণখেলাপিদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানিয়ে ছবিসহ ব্যানার টাঙিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে এমন কর্মসূচি পালন করে ন্যাশনাল ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়া সিলেট এবং কুষ্টিয়ায় একই কাজ করেছে এক্সিম ব্যাংক। অগ্রণী ব্যাংকও করেছে কুষ্টিয়ায়। জানুয়ারিতে সবচেয়ে বড় আকারে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করে ইউনিয়ন ব্যাংক। রাজধানীতে ৫ গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির সামনে ব্যানার নিয়ে দলবলে হাজির হয়েছিলেন কর্মকর্তারা।
ইউনিয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিজাম ইবনে সিরাজের দাবি, এই পন্থায় অপদস্থ হওয়ার ভয়ে অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
নিজাম ইবনে সিরাজ বলেন, ‘দুই–একজন এ ব্যাপারে চিঠিও দিচ্ছেন ব্যাংকে যে ঠিক আছে, আমরা রিসিডিউল করতে চাই। অনেকেই আগায় আসতেসে।’
এদিকে, ব্যাংকার বহিঃসাক্ষ্য আইন-২০২১ পরিপালনে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ আইনে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও কাছে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন না। এই আইন না মানলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবেন।
তবে গ্রাহকদের সামাজিকভাবে হেয় করে খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব নয় বলে মত বিশ্লেষকের।
বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘মূল উদ্দেশ্য তো আপনার, গ্রাহকের টাকা ফেরত আনা। আপনার উদ্দেশ্য তো তাকে ভিক্টিমাইজ করে সমাজের কাছে হেয় করে দিলেই কি আপনার টাকা ফেরত আসবে। ফেরত তো আসবে না।’
আইনের দুর্বলতায় ঋণখেলাপিরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। তবে, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলছেন তারা।
ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আপনি হ্যান্ডেল করবেন? সরকার যদি চায়, ইয়েস। আমরা এই ব্যাংকগুলোকে টার্ন অ্যারাউন্ড করাবো, খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করবো। সরকারের একটা রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাই এনাফ। এতো বড় বড় আইনের দরকার নাই।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।