বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন-ভল্টের লকারে ২০ বছর পর্যন্ত অর্থ-সম্পদ রাখতে পারে ব্যাংকটির কর্মীরা। সাবেক-বর্তমান প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা এমন লকার ব্যবহার করছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমন বিশেষ সুবিধা ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেয়। সুযোগ তৈরি করে দেশের ভেতরেই অর্থ আড়াল করার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট কয়েকধাপের নিরাপত্তা বলয়ে একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। যেখানে বড় অংকের নগদ অর্থ, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণের রিজার্ভ রাখা হয়। স্থল ও বিমানবন্দরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জব্দ করা স্বর্ণও থাকে এই ভল্টে।
রাষ্ট্রীয় এই নিরাপদ স্থানেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাখতে পারেন ব্যক্তিগত সম্পদ। তাদের জন্য রাখা বিশেষ লকারে অপ্রদর্শিত বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ আছে বলে মনে করে দুদক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া দুদকের চিঠি ও অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি বিবেচনায় লকারগুলো ফ্রিজ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডেস্ক থেকে আমরা বক্সের মধ্যে রেখে, মার্কিন কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে সিলগালা করে, সিগনেচার করে তাদের হাতে দিয়ে দেই। তারা সেখানে রাখে। এটা একটা আলমিরার ভেতরে অল্প জায়গায়। আলাদা করে কোনো লকার নেই। কারণ কোনো চাবি বহন করার এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মচারির নেই।’
গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর লকার খুলে দেশি-বিদেশি মুদ্রা, স্বর্ণালংকারসহ ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। যা তাঁর নিয়মিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য এমন লকার সুবিধা প্রশ্নবিদ্ধ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কোনো বিশেষ প্রভাবশালী কর্মকর্তা বা কর্মচারিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের বৈধ বা বৈধ আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ জমা রাখার জন্য এক ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। প্রকারান্তরে এ ধরনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনাকে উসকে দেওয়া হয়েছিল কিনা–এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।’
গত দেড় দশকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজনের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।