বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলে বড় ধরনের সংকট দেখছে না ব্যবসায়ীরা। তারা রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো ও কার্গো ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নেপাল-ভুটানে পণ্য রপ্তানিতে ট্রানজিট সুবিধা বহাল রেখেছে ভারত। তবে, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানিতে খরচ বাড়বে।
আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদাপূরণে সময়মতো পণ্য পাঠাতে কখনও কখনও আকাশপথও ব্যবহার করতে হয়। বাংলাদেশের বিমানবন্দরের সক্ষমতা কম থাকায় করোনাকালে ২০২০ সালে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয় ভারত। যার আওতায়, তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানিতে ভারতের সমুদ্র ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারতো দেশের ব্যবসায়ীরা।
এই সুবিধা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে পোশাক রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, বছরে আকাশ পথে আনুমানিক যে ১২০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, তার ৮ থেকে ১০ ভাগ যেত ভারত হয়ে। সেক্ষেত্রে কার্গো ভাড়া বাঁচতো ২০ থেকে ২৫ ভাগ।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দেখতাম যে ওখানে সব সময় ২০–৩০ ভাগ সস্তা থাকত। আমাদের বিমানবন্দরে একটা ব্যাকলগ হতো, ওটার জন্যই আমরা কলকাতায় যেতাম। আমরা আশা করব, থার্ড টার্মিনাল হচ্ছে, এখানে যেন বাংলাদেশের এক্সপ্যানশন অব বিজনেস..। আমরা এখন ৩৯ বিলিয়ন এক্সপোর্ট করছি, ১০০ বিলিয়ন আমরা সামনে বলছি যে করব। এটাকে আমলে নিয়ে এই অবকাঠামো যেন আমাদের বিমানবন্দরেই থাকে এবং কোনো ট্রান্সশিপমেন্টের যাতে প্রয়োজন না হয়।’
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের যে এয়ার কার্গো ফ্যাসিলিটি, এটাকে যদি আমরা কস্ট কমপিটিটিভ করতে পারি, দক্ষতা বাড়াতে পারি, সিভিল এভিয়েশন-বিমান-সরকার, সবাই যদি সমন্বয় করতে পারি ইভেন ব্র্যান্ডগুলোও আমাদের সাথে সমন্বয় করতে আগ্রহী।’
বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পেছনে যুক্তি হিসেবে, বিমানবন্দরে স্থানীয় রপ্তানিকারকদের পণ্যজট দেখাচ্ছে ভারত। তবে, ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, ‘নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার থেকে শুরু করে অন্য কোনো তৃতীয় দেশ, প্রত্যেক জায়গাতেই আমাদের নিজস্ব ক্যাপাসিটিতে পুরো ব্যবস্থাটা করে নিতে হবে। যাতে করে আমরা এই দেশগুলোতে এক্সপোর্ট করতে পারি। ভারত থেকে হলে ভালো হত যে খরচটা কমত, সময়টাও কম লাগত। আমাদের ভারতের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করার পর বুধবার বেনাপোল বন্দর থেকে চারটি মালবাহী ট্রাক ঢুকতে দেয়নি ভারত।