৪ দিনের সম্মেলনে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। বিনিয়োগ সম্মেলনে যেরকম সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা খুবই আশাবাদী বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ রোববার ৪ দিনের সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরে তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা জানান তিনি।
ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘চার দিনব্যাপী ইনভেস্টমেন্ট সামিট শেষ হলো। দশে দশ পাবার মতো হয়নি সব ক্ষেত্রে। কারো যদি ডিসাপয়েন্টমেন্ট থাকে তার জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। আমরা গত তিনমাস ধরে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড এর একটা সামিট করার জন্য। এই সামিটের অর্গানাইজার অবশ্য সরকার একা ছিল না। মিডিয়া কমিউনিটি, প্রাইভেট সেক্টর, অ্যাম্ব্যাসি, ফরেন পার্টনার, পলিটিক্যাল পার্টিরা, সরকারের অন্যান্য সংস্থা সবাই অ্যাকটিভলি অংশগ্রহণ করেছেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। যতটুকু ভালো, পুরাটাই সবার ক্রেডিট। ফেইলিউরগুলা আমাদের। সামনে আমরা আরো ভালো করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। যেরকম সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা খুবই আশাবাদী। প্রতি বছর আমাদের এরকম কিছু একটা অর্গানাইজ করা উচিত। প্রাসঙ্গিক একটা কথা বলে রাখি এখানে।’
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লেখেন, ‘অনেকেই সামিটের পলিটিক্যাল অনুমোদন এবং ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। দেখুন, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান আগামীবার যারা সংসদে আসবেন তাদের সবার কমন এজেন্ডা। আমি আগেও বলেছি, বড় সবগুলো দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায়, সামিট ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের স্পষ্ট সমর্থন ও সামিটে অংশগ্রহণের জন্য স্পেশাল ধন্যবাদ। সামিট কি সফল হয়েছে বা সামিটের উদ্দেশ্য এচিভ করা গেছে? এই প্রশ্নের জবাব আপনারা দিবেন। মার্কেট দিবে। সময় দিবে। এই মুহূর্তে সামিটের সাফল্যকে দুইভাবে আমরা মাপার চেষ্টা করতে পারি।’
‘স্ট্যাটিসটিকালি বা একেবারেই নাম্বার দিয়ে এবং মোট অংশগ্রহণ: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোট উপস্থিত ছিলেন ৭১০ জন। ৪১৫ জন বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি। বাকিরা দেশি ব্যবসায়ী বা সরকারি সচিব বা তদূর্ধ্ব। এছাড়াও ব্রেকআউট সেশনগুলাতে মোট অংশগ্রহণ করেছে সাড়ে তিন হাজারের চেয়েও বেশি। এর বাইরেও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই কয়দিন অনেকে এসেছেন ইনভেস্টরদের সাথে করিডোরে দেখা করার জন্য।’
ওই পোস্টে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘মোট প্যানেলিস্ট ছিলেন ১৩০ জন। অফিসিয়ালি দ্বিপাক্ষিক মিটিং হয়েছে ১৫০ টি। বাণিজ্য উপদেষ্টা, স্পেশাল অনভয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, এমন অনেকেই সারাদিন ছিলেন ভেন্যু তে। এমওইউ সাইন হয়েছে ৬টি।’
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা হয়েছে হান্ডা গ্রুপ ও শপ আপ মিলে মোট ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার। বাংলাদেশ সরকারের সামিটে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পার্টনার সংস্থা থেকে অনুদান পেয়েছি আমরা আরো ৩.৫ কোটি টাকা।’
‘বিদেশিদের বাংলাদেশ সম্মন্ধে ধারণার বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট একদিনে আসে না। সামিটে এসে ইমোশনাল হয়ে কেউ হুট করে ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে ফেলে না। যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে করেন তারা জানেন। কিন্তু বাংলাদেশ যদি প্রথম ধাপেই মেনু থেকে বাদ পড়ে যায় নেগেটিভ ধারণার জন্য তাহলে খেলা শুরু হবার আগেই আমরা হেরে গেলাম। বিদেশে বসে গুগল সার্চ করলে আমাদের নিয়ে যে পারসেপশন তৈরি হয়, সেটা রিয়েলিটির চেয়ে অনেক বেশি নেগেটিভ। অনেকেই অনেক ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন। যেমন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ব্যবসায় বান্ধবতা ইনডেক্স এ নাকি এখনো আমাদের র্যাংকিং ১৬৭। প্রথমত, এই র্যাংকিং ২০২১ সালের। দ্বিতীয়ত, র্যাংকিং প্রসেস এ অনেক ভুল পাওয়া যাওয়ায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক নিজেই এটা ডিসকনটিনিউ করে দিয়েছে। এটাকে এখনো অনেকে রেফার করেন। আসলে আমাদের দেশের পজিটিভ নেগেটিভ দুইটাই আছে। পৃথিবীর সব দেশেরই তাই। সেই দুঃখে কি আমরা বাংলাদেশকে মার্কেট করা বন্ধ করে দিবো? ইনভেস্টরদের বলবো ভাই আপাতত আসার দরকার নাই, আমরা আগে সব ঠিক করে নেই প্লিজ? আমি তা মনে করি না। বিডার একটা প্রাথমিক দায়িত্বই তো দেশকে প্রমোট করা। আমাদের একই সাথে ইস্যুগুলো সলভ করা, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন করা আর দেশকে প্রমোট করা চালিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যত বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে বাংলাদেশ ২.০ কেন আগের থেকে আলাদা এবং আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমরা কি কি ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি। যিনি এই সামিটে বাংলাদেশে প্রথম এসেছেন, তার ইনভেস্ট করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো সম্ভাব্য বিনিয়োগের একটা পাইপলাইন তৈরি করা। তাদেরকে আমরা ট্র্যাক করবো। সাহায্য করার চেষ্টা করবো। কনভিন্স করার চেষ্টা করবো। অনেকেই আসবেন না। কিন্তু আমাদের চারদিনের দৌড়ঝাঁপে যদি ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় আর বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের ধারণা একচুলও বদলায়, তাহলে আমাদের আনন্দের শেষ থাকবে না।’
আমরা একটা পজিটিভ মোমেন্টাম আনার চেষ্টা করেছি– জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘৭-৮ তারিখে বিনিয়োগকারীদের ইপিজেড ও ইকোনমিক জোন ঘুরিয়ে বিনিয়োগ ব্যবস্থার আসল চিত্রটা তুলে ধরা হয়েছে। স্টার্টআপদের জন্য আলাদা সেশন করা হয়েছে। ৯ তারিখ সকালে বিনিয়োগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনা আর আমাদের অ্যামবিশনের কথা শেয়ার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় আমাদের শত বছরের পুরনো সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৯-১০ তারিখের বাকি সময়টা ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট, সরকার, পলিটিক্যাল পার্টি, মিডিয়া, লোকাল বিজনেস আর বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নেটওয়ার্কিং ফ্যাসিলিটেট করা হয়েছে। আর পুরা সময়টা ধরে চলেছে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর।’
ওই পোস্টে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লিখেছেন, ‘প্রেজেন্টেশনটা নিয়ে অনেক কথা হয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আমি ছোট্ট করে একটু বলতে চাই। প্রেজেন্টেশনের পেছনে অনেকে কষ্ট করেছেন। তারা সবাই এটার কারিগর। সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকে অনেক প্রশংসা করেছেন এবং ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন আমাকে। সেজন্যে অনেক ধন্যবাদ। আমি জাস্ট আমার বেসিক চাকরিটা করছি। ইনভেস্টমেন্ট সামিট প্রসেস এর মাত্র প্রথম ধাপ। এটার জন্য আলাদা কোনো বাহবা পাবার আশা আমি একদম করি না। কাজগুলো কমিটেড সময়ের মধ্যে হচ্ছে কিনা, এর জন্য আমাদের অ্যাকাউন্টেবল করুন। আর এই সামিটে প্রেজেন্টেশনটা মধ্যমণি না। মধ্যমণি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আর আমাদের উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।’