অর্থপাচার করে গোল্ডেন ভিসায় দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। এর মধ্যে ৭০ জন বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ তালিকায় আছেন পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠরা।
এসব ব্যক্তির কর সংক্রান্ত তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চেয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে দুবাইয়ে ৯৭২টি স্থাবর সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।
অর্থনীতি নিয়ে তৈরি শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে উঠে আসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচারের তথ্য। হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ।
দুদকের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে, ৪৫৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ৯৭২টি স্থাবর সম্পত্তি কিনেছে। এসব ব্যক্তি সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে অর্থপাচার করে, সেই অর্থের বিনিময়ে গোল্ডেন ভিসা সুবিধার আওতায় দেশটিতে সম্পত্তি কিনেছেন বলে জানায় দুদক।
গত ১৬ এপ্রিল দুদকের এক চিঠিতে এসব ব্যক্তির আয়কর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে এনবিআরের কাছে। চিঠিতে বলা হয়, দুবাইয়ে সম্পদ কেনা, অর্থের উৎস হিসেবে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে রাখা অর্থ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চিহ্নিত ৭০ জনের তালিকায় যারা আছেন—
আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান একরামুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা /হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান /সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান এবং মায়নুল হক সিদ্দিকী।
এছাড়াও তালিকায় আরও যেসব নাম রয়েছে- মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী এবং মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম এবং আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি সরকারের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতার ওপর নির্ভর করছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সে দেশের আইন অনুযায়ী এটা প্রমাণ করতে হবে যে, এটি (পাচার অর্থ) বাংলাদেশ থেকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় এসে এখানে লিগ্যালাইজ হয়েছে। এটা খুব জটিল একটি প্রক্রিয়া। কাজেই এখানে একদিক থেকে আমাদের আশাবাদী হতে হবে যে, এটা সম্ভব। কিন্তু এটা খুব সহজে, স্বল্প মেয়াদে আসবে এটা আশা করা কঠিন।’
দুদকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম এবং কর সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে পাঠাতে বলেছে দুদক।
