দুর্বল ১০টি ব্যাংককে ৩২ হাজার ১২০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তার পরও গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না কয়েকটি। টাকা না পেয়ে হতাশ গ্রাহকরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের মতো অর্থ সংকট না থাকায় গ্রাহকের আস্থা ফিরছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে কোনো ব্যাংক দীর্ঘদিন চলতে পারে না।
দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দেড় দশকে ব্যাংক খাতে লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ডজনখানেক ব্যাংক।
দেউলিয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে দুর্বল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে সরকার। ১০টি ব্যাংককে কয়েক ধাপে দেওয়া হয় ৩২ হাজার ১২০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা। তবে, এরপরও সংকট কাটেনি কয়েকটি ব্যাংকে। চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাচ্ছে না গ্রাহকরা।
টাকা তুলতে আসা একজন গ্রাহক বলেন, ‘এক লাখও চাই না, দুই লাখও চাই না। আমাদের টাকা আছে ৪০ লাখ, ব্যাংকে। ৫০ হাজার টাকা তুলতে চেয়েছি, না করে দিয়েছে। ধরেন এক লাখ টাকা তুলব, দেখা যাচ্ছে যে ৫০ ভাগ দিতে পেরেছে। এটা তুলতে গিয়েও এ টেবিলে যাও, ও টেবিলে যাও। ২০ হাজার টাকার ওপরে টাকাই দিচ্ছে না। এভাবে আর কতদিন ভোগান্তি পোহানো যায়।’
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, টাকা তোলার পাশাপাশি জমাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। কাউন্টারে লেনদেন প্রায় স্বাভাবিক। অনলাইন সেবাও পাচ্ছেন গ্রাহকরা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ম্যানেজার এম এ মোতালিব বলেন, ‘এক সাথে বড় অঙ্কের টাকা না তুলে আমরা তাদের অনুরোধ করি আপনারা ছোট ছোট করে টাকা দেন। আমরা কাউকে ইনসিস্ট করছি না। এটা তারাই আমাদেরকে সহযোগিতা করছে।’
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের দিলকুশা শাখার ম্যানেজার চন্দন কুমার দাস বলেন, ‘অনেক গ্রাহকই টাকা তুলতে আসতেসে, ফলে চাপটা বেশি পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে বেশি বড় অ্যামাউন্ট আমরা দিতে পারছি না। দিচ্ছি না আরকি।’
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দুর্বল ব্যাংকে গ্রাহক আস্থা ফেরাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। কমাতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর তাকিয়ে থেকে, তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে কোনো একটি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এটা কোনো ভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ কারণে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরেও অনেক ব্যাংকই তাদের গ্রাহকদের সব চাহিদা মেটাতে পারছে না।’
সংস্কার ও সুশাসন অব্যাহত থাকলে শিগগিরই ব্যাংক খাত শক্তিশালী হবে, আশা বাংলাদেশ ব্যাংকের।