ব্যাংক খাতে গেল ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। মার্চ শেষে যা প্রথমবার ছাড়াল ৪ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মোট ঋণের এক চতুর্থাংশই এখন খেলাপি। আর রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি প্রায় ৪৬ ভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ঋণের প্রকৃত পরিস্থিতি সামনে আসায় বেড়েছে খেলাপি ঋণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনী জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে হবে।
বিগত সরকারের সময়ে নানা নীতি সহায়তার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। তবে এভাবে মন্দ ঋণ নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকেই ব্যাংক খাতে চাপিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ দৃশ্যমান হতে শুরু করে। ফলে, অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে এর পরিমাণ ও হার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চ শেষে ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ২৪ ভাগের বেশিই এখন খেলাপির খাতায়। গত ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, ‘আইএমএফের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণের কিস্তির মেয়াদ কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে আগে যেখানে ঋণ খেলাপি হিসাবে দেখানো হতো না, সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই খেলাপি ঋণের আওতায় চলে এসেছে। এই সমন্বিত প্রভাবের ফলে কয়দিন আগেই ক্লাসিফাইড খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের ত্রিমাসিকের তুলনায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুজ্জামান বলেন, ‘কোভিডের সময় ঋণ ক্লাসিফিকেশনের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ওই ছাড়গুলোও কিন্তু শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে এখন সবারই ঋণ খেলাপি বাড়ছে।’
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার বেড়ে ২০ শতাংশে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়মের বাইরে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল সেগুলো খেলাপি হয়ে পড়ছে।
অথনীতি বিশ্লেষক মাজেদুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ঋণগুলো দেওয়া হয়েছিল। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আশেপাশে যারা ছিল তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। খেলাপি ঋণ বেড়েছে আরও বাড়বে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারির পাশাপাশি, আইনের প্রয়োগ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।