আগামী অক্টোবরের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক মিলে একটি বড় ব্যাংক গঠন করা হতে পারে। নতুন এই ব্যাংকের যাত্রার শুরুতে মূলধন জোগান দেবে সরকার। তবে, নিজেদের আর্থিক অবস্থা ভাল দাবি করে একীভূত হওয়ার পক্ষে নয় এ তালিকায় থাকা এক্সিম ব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্বল ব্যাংকে গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ও সুশাসনের জন্য একীভূত করার বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক ঋণ দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। নামে বেনামে ঋণ, দুর্নীতি ও পাচারের ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে ডজন খানেক ব্যাংক। পরে কয়েক ধাপে তারল্য সহায়তা দিয়েও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বেশ কয়েকটি ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, দুর্বল পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ৯৬ শতাংশের ওপরে। ৯৪ শতাংশ খেলাপি ঋণ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ৯৩ শতাংশ আর এসআইবিএল এর খেলাপি ৫৮ শতাংশ। তবে ২৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দুর্বল পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার মাধ্যমে মূলধন জোগান দেয়ার পাশাপাশি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘একই শ্রেণিভুক্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে একটি ব্যাংকে পরিণত হবে। অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য এটার মালিকানা ও পরিচালনার দায়ভার সরকার গ্রহণ করবে। আবার উপযুক্ত সময়ে একজন সম্ভাব্য গ্রাহকের কাছে এগুলো ছেড়ে দিয়ে আবার বেসরকারিকরণ করা হবে।’
একীভূত হলে ব্যাংকে গ্রাহক আস্থা ফিরে পাবে বলে আশা করেন ব্যাংকাররা। তবে এক্সিম ব্যাংকের দাবি, অন্যদের থেকে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো। এ সিদ্ধান্ত অনেকটা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের ওপর।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এই যে পাঁচটা ব্যাংক যার যার নামে তো ভালোই চলতেছে, ভালোই লুটপাট করতেছিল। তাদেরকে কেন আপনি একীভূত করছেন, একীভূত করা হচ্ছে এই ব্যাংকগুলোর যে ক্ষতি হয়ে গেছে সেই ক্ষতিতা দূর করার জন্য, ক্ষতি পূরণের জন্য। ক্ষতি হয়েছে জনগণের।’
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমাদের এমফিল যে ২৮ শতাংশ ওদের সেটা ৫৮ থেকে ৯৬ শতাংশ। আমাদের কী কারণে, কোন যুক্তিতে, কোন ভিত্তিতে আমাদের একীভূত হওয়ার কথা বললেন আমরা আসলে বুঝতেও পারতেছি না। আমরা কোনো অবস্থাতেই চাই না এক্সিম ব্যাংক তাদের সঙ্গে একীভূত হোক।’
বিশ্লেষকরা জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে ব্যাংকগুলো নিজেদের সক্ষমতায় ঘুরে দাঁড়াতে পারলে , তা বিবেচনা করা উচিত।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করব। যেসব গ্রাহকের টাকা এই সব ব্যাংকে আছে তারা যাতে মার না খান। দ্বিতীয় যেটা, কর্মচারীরা যারা আছেন তাদের চাকরি তাড়াতাড়ি হারানোর শঙ্কা নাই।’
ব্যাংক একীভূত হলে গ্রাহকদের লেনদেনে কোন সমস্যা হবে না, এছাড়া কর্মীরা চাকরি হারাবে না বলেও জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।