জালিয়াতি ও দুর্নীতির কারণে বেড়েই চলেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বিতরণ করা ঋণের ৩৫ শতাংশের বেশি খেলাপি। তাই, ব্যাংকের মতো, দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু সংখ্যা কমিয়ে আনা নয়, ঋণ দেওয়ায় অনিয়মের সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থা নতুন নয়। পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছে, পুরো খাত এখনও তার জের টানছে। পি কে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।
অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা চরম নাজুক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে, মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৩৫ শতাংশের বেশি। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে ব্যাংকগুলোকে তাদের ক্রাইসিস থেকে উত্তোরণ করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, একই ভাবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে সচল করা যায় সেই উদ্যোগ নিবে। যদি সেটা করা না যায় তাহলে তার ব্যাপারে হয়তো চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে। ওই উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রহণ করেছে।’
দেশের ৩৫ টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টি প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের চিন্তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান একদিকে যেমন আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে পারছে না, তেমনি নতুন আমানত সংগ্রহেও ব্যর্থ হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘নন-ব্যাংকগুলো করছে, মানুষের কাছ থেকে কিছু ফিক্সড ডিপোজিট নিয়েছে বা বিভিন্ন জায়গাগুলো থেকে ধার করেছে। যেহেতু নতুন করে ব্যাংকের লাইসেন্স পাচ্ছে না, ওই লোকগুলো টাকা গুলো মারার জন্য এই কাজটা করছে। সুতরাং এদের উদ্দ্যোশ্যই তো খারাপ ছিল। আমার মতে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধই করে দেওয়া উচিৎ। কারণ এদের কোনো দরকার নেই।’
বিশ্লেষকদের মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না। খেলাপিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হওয়ার তাগিদ তাদের।