বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কোচ হোল্ডিং। সম্প্রতি কোচ হোল্ডিং এবং তাঁদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেকো ও আইগ্যাস-এর উচ্চপদস্থ নির্বাহী কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ এক সফরে রাজধানী ঢাকা সফর করেছেন। সফরকালে কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন। গত ৫ মার্চ প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোচ গ্রুপের কনজ্যুমার ডিউরেবল ব্যবসার ফ্লাগশিপ প্রতিষ্ঠান বেকো’র একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড। কোচ গ্রুপের শীর্ষ কর্তাদের এবারের ঢাকা সফরের আয়োজক ছিলেন সিঙ্গার বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ নির্বাহীরা। এছাড়া এই সফরের অন্যতম অংশীদার ছিল ইউনাইটেড আইগ্যাস এলপিজি, যা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজেস ও আইগ্যাস-এর একটি যৌথ উদ্যোগ।
ঢাকা সফরকালে প্রতিনিধি দলে ছিলেন কোচ হোল্ডিং-এর সিইও মিস্টার লেভেন্ত চাকিরোলু; কোচ হোল্ডিং-এর কনজ্যুমার ডিউরেবলস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ড. ফাতিহ কেমাল এবিচলিওলু; কোচ হোল্ডিং-এর এনার্জি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়াগিজ ইউবোলু; আইগ্যাসের জেনারেল ম্যানেজার মেলিহ পয়রাজ; বেকো-এর তুরস্ক ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জান ডিনচার; বেকো-এর চিফ মার্কেটিং অফিসার আকিন গারজানলি; বেকো-এর চিফ সাসটেইনেবিলিটি, কোয়ালিটি ও কাস্টমার কেয়ার অফিসার ফাতিহ ওজকাদি এবং বেকো-এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জাফের উস্তুনের।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সম্ভাবনাময় প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে, কোচ হোল্ডিং-এর সিইও লেভেন্ত চাকিরোলু বলেন, ‘কোচ গ্রুপে আমাদের মূলনীতি হলো ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, আমাদের অংশীদারদের সঠিক মূল্যায়ন করা, বিশ্ববাজারে উপস্থিতি সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্যময় করা এবং গ্রাহককেন্দ্রিক উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া। আমরা বিশ্বব্যাপী ভবিষ্যতের শিল্প খাতগুলোর বিকাশে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। গত পাঁচ বছরে, আমরা টেকসই প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাপী সম্মিলিতভাবে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছি। বাংলাদেশ এবং বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ভোক্তা টেকসই পণ্য (কঞ্জুমার ডিউরেবল) এবং জ্বালানি খাতে স্থানীয় উৎপাদন, গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) এবং সম্ভাব্য রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে এই অঞ্চলের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি দৃঢ়, এবং আমরা ভবিষ্যতেও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, কার্যক্রম উন্নত করতে এবং দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
সফরকালে প্রতিনিধিদলটি নবনির্মিত সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন। এই প্ল্যান্টটিকে বাংলাদেশে কোচ হোল্ডিং-এর গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। এছাড়াও প্রতিনিধিদল ইউনাইটেড আইগ্যাস এলপিজি পরিদর্শন করেন, যা বাংলাদেশে পরিষ্কার ও কার্যকর জ্বালানি সমাধানের প্রসারে কাজ করছে।
বাংলাদেশে নগরায়ণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান ভোক্তাপণ্য শিল্প (কনজ্যুমার গুডস ইন্ডাস্ট্রি) আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে কোচ হোল্ডিং-এর কনজ্যুমার ডিউরেবলস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ড. ফাতিহ কেমাল এবিচলিওলু বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকে আমাদের লক্ষ্য শুধু ব্যবসা সম্প্রসারণই নয়, বরং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থবহ অবদান রাখা। সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড অধিগ্রহণের মাধ্যমে, আমরা সফলভাবে বেকো-এর বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাকে সিঙ্গারের ১২০ বছরের ঐতিহ্য, গভীর স্থানীয় জ্ঞান এবং বিস্তৃত পরিবেষণ নেটওয়ার্কের সাথে একীভূত করেছি, যার লক্ষ্য ভোক্তা টেকসই পণ্য শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং বাংলাদেশি ভোক্তাদের জীবনমান উন্নত করা।এই সমন্বয় খুচরা বাজারে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে, কর্মীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করেছে এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্পর্কে ড. ফাতিহ বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে, আমরা সিঙ্গার বাংলাদেশে ১৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছি, যার মধ্যে সর্বশেষ ৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে নতুন কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, যা ৪,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটি দেশের প্রতি আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। আমাদের লক্ষ্য সিঙ্গারকে বাংলাদেশের শীর্ষ ভোক্তা টেকসই পণ্য ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ভবিষ্যতে, আমরা শিল্প বিকাশকে ত্বরান্বিত করবো, বিশ্বমানের রিটেইলিং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গ্রাহকসেবা উন্নত করবো এবং এই খাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।’
কোচ গ্রুপ বাংলাদেশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ, স্থানীয় দক্ষতা উন্নয়ন এবং উন্নতমানের পণ্য ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কোচ হোল্ডিং কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চায়, যাতে তাঁরা বাংলাদেশের উন্নয়নে একজন বিশ্বস্ত ও মূল্যবান অংশীদার হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে আরও সুসংহত করতে পারে।
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম.এইচ.এম. ফাইরোজ বলেন, ‘সিঙ্গার বাংলাদেশ ভোক্তা টেকসই পণ্য শিল্পের পথপ্রদর্শক এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ রিটেইলার। গ্রাহকদের প্রয়োজনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা আমাদের ব্যবসা রূপান্তর করছি, যাতে বেকো-এর বিশ্বমানের রিটেইল এক্সপেরিয়েন্স বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। আমরা এখন আমাদের রূপান্তর অভিযাত্রার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছি, যা উৎপাদন, রিটেইল অভিজ্ঞতা এবং কর্মপরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। আমাদের রিটেইলিং-এর এই রূপান্তর সারাদেশের সকল টাচপয়েন্টে বাস্তবায়িত হবে, যাতে বাংলাদেশি ভোক্তারা এক নতুন মাত্রার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। আমরা বিক্রয়োত্তর সেবা, দক্ষতা উন্নয়ন, আইটি সহায়তা এবং সামগ্রিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও কাজ করছি। সিঙ্গার বাংলাদেশকে দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত করার লক্ষ্যে আমরা উদ্ভাবন, টেকসই উন্নয়ন এবং গ্রাহকদের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কাজ করে যাচ্ছে কোচ গ্রুপ। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে দেশ দুটির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে তুরস্ক ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।