বিশবাইশে বলিউড: ১০ ফ্লপের বিপরীতে ১ হিটের করুণ গল্প
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫৭ পিএমআপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৩, ০৫:৪৮ পিএম
২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া কয়েকটি বলিউডি ও দক্ষিণী সিনেমা।
২০২০ সাল থেকে শুরু বলিউডের মন্দাভাব। করোনা মহামারির কারণে সেই সময় অবশ্য শুধু বলিউড নয়, বরং হলিউডসহ বিশ্বের তাবৎ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেই শুরু হয়েছিল হাহাকার। মাঝের ২০২১-এ সেই মন্দাভাব বেশ কিছুটা কাটিয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। ওই ধারাবাহিকতাতেই হিন্দিভাষী বলিউডের জন্য বিশবাইশ ছিল স্বরূপে ফেরার সুযোগ। কিন্তু উল্টো গেল বছরে বলিউডের বাণিজ্যের পালে লেগেছে ক্ষতির হাওয়া। এই বছরটায় বড় বড় সুপারস্টারদের ছবির বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া যেমন আছে, তেমনি আছে বিশাল বাজেটের মহাসমারোহে মুক্তি দেওয়া ছবির দর্শকদের কাছে পাত্তা না পাওয়ার গল্প।
বিশবাইশে বলিউড নিজের শক্তিশালী সত্তা হারিয়ে ফেলেছে অনেকটাই। আগে যেখানে দক্ষিণী, তেলেগু বা মালায়লম ছবি বলিউডে পাত্তাই পেত না, সেখানে এখন মার মার কাট কাট ব্যবসা করছে সেসব ছবিরই হিন্দি সংস্করণ। সালমান, শাহরুখ বা আমির খানদের রাজত্ব যেমন ভেঙে চুরমার, তেমনি অক্ষয় কুমার, হৃতিক রোশন বা সাইফ আলী খানের সূর্যও প্রায় অস্তগামী। দক্ষিণের কাছে কনটেন্টের মানে, গুণে ও গল্পে পেছাতে পেছাতে মরিয়া বলিউড ২০২২ সালে দক্ষিণী তরিকা অনুসরণ করারও চেষ্টা করেছে বেশ। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি খুব একটা। নকল দিয়ে কি আর অরিজিনালকে ঠেকানো যায়?
এক কথায়, বলিউডের এতদিনকার গল্প বলার চিরাচরিত স্টাইল ও উপস্থাপনার ধরনকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছে দর্শকশ্রেণি। ফলে ২০১৯ সালে যেখানে ভারতীয় সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সম্মিলিত আয়ের ৭৫ শতাংশ ছিল বলিউডের দখলে, সেখানে ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ৫১ শতাংশে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জোয়ার, হলিউডের ছবি মুক্তি এবং ভারতের অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাছেই জায়গা হারাচ্ছে বলিউড।
ভারতীয় মিডিয়া ও বিনোদন জগত নিয়ে কাজ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অরম্যাক্স মিডিয়ার দেওয়া হিসাব বলছে, ২০২২ সালের পুরোটা জুড়ে সব মিলিয়ে ভারতের তাবৎ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো মোট আয় করেছে ১০ হাজার কোটি রুপির কিছু বেশি। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে এই অংকটি ছিল ১০ হাজার ৯৪৮ কোটি রুপি। সেদিক থেকে দেখলে মনে হতেই পারে, আয় তো খুব একটা কমেনি! সমস্যা হলো, আগে যেখানে মোট আয়ে বলিউডি ছবির হিস্যা বেশি ছিল, এখন তা কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এতটাই যে, ভারতের সবচেয়ে বেশি আয় করা চলচ্চিত্রের তালিকায় মাত্র চার-পাঁচটি এখন বলিউডি ছবি। আবার একদম শীর্ষ স্থানেও জয়জয়কার দক্ষিণের। সবচেয়ে বেশি আয় করা দুটো চলচ্চিত্র হলো ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার টু’ (৪৩৪.৭০ কোটি রুপি) এবং ‘আরআরআর’ (২৭৪.৩১ কোটি রুপি)। তালিকার তৃতীয় স্থানটিও দখল করে নিয়েছে কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া হলিউডের ছবি ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’।
বলিউডি ছবির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয়ের তালিকায় রয়েছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র - পার্ট ওয়ান: শিবা’, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘দৃশ্যম টু’, ‘ভুল ভুলাইয়া টু’ এবং ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’। এর মধ্যে ‘ভুল ভুলাইয়া টু’ ও ‘দৃশ্যম টু’ মূলত এর আগের পর্বের ছবির কারণে বক্স অফিসে কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। দৃশ্যম টু তো সরাসরি রিমেক ছবি। আবার ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর বিষয়বস্তু নিয়েই আছে বেজায় বিতর্ক। বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত এই ছবিতে সত্যের অপলাপ হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর ‘ব্রহ্মাস্ত্র – পার্ট ওয়ান: শিবা’ বলিউডি ছবির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫৭ কোটি রুপি আয় করলেও, এর কনটেন্ট ও মেকিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ভারতীয় দর্শকদের মধ্যেই।
সমালোচকদের বক্তব্য, সুপারহিরো মুভি হিসেবে এর নির্মাণ বিশ্বমানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি। আর যে দেশে হলিউডের অ্যাভেঞ্জারস বা ব্যাটম্যান-সুপারম্যানের সর্বোচ্চ মানের ভিএফএক্স সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র মুক্তি পায় হরহামেশা, সেখানে দেশি সুপারহিরোদের দুর্বল চিত্রায়ন কে দেখতে চাইবে?
গেল বছর বলিউডে ফ্লপের স্বাদ পায়নি কে? যেসব সুপার স্টারেরা আগে ছবি হিট করানোর মূল কুশীলব ছিলেন, তাঁরা সবাই হোঁচট খেয়েছেন এ বছর। আয়ুষ্মান খুরানার তিনটি ছবিই ফ্লপ হয়েছে। প্রভাসের ‘রাধে শ্যাম’ সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি। সাইফ আলী খান ও হৃতিক রোশানের ‘বিক্রম ভেদা’ সিনেমাও দেখেনি অর্থের ঢল। ফ্লপের তালিকায় আরও আছে শহীদ কাপুরের স্পোর্টস ড্রামা ‘জার্সি’, টাইগার শ্রুফের ‘হিরোপান্তি ২’, অজয় দেবগনের ‘রানওয়ে ৩৪’, রণবীর সিংয়ের ‘৮৩’, অক্ষয় কুমারের ‘বচ্চন পান্ডে’, ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’, ‘রক্ষাবন্ধন’ ও ‘রামসেতু’। যে অক্ষয় কুমারের এক ছবি দিয়েই আগে বক্স অফিসে শত শত কোটি রুপির ব্যবসা হতো, সেই অক্ষয়ের চার ছবি মিলিয়ে আয় হয়েছে ২৩০ কোটি রুপির কিছু বেশি। আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ ও রণবীর কাপুরের ‘শমসেরা’ও পেয়েছে ফ্লপের তকমা।
অন্যদিকে দক্ষিণে শুধু হিট, সুপার হিট আর ব্লকবাস্টার হিট। ইয়াশের ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’, রামচরণ ও জুনিয়র এনটিআরের ‘আরআরআর’, কমল হাসানের ‘বিক্রম’, কার্থির ‘পোন্নিয়ান সেলভান ১’ বা কন্নড় সিনেমা ‘কানতারা’ শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বেই ব্যবসা করেছে ফাটিয়ে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বলিউডের এই পিছিয়ে যাওয়ার মূল কারণ ওটিটির যুগে নিজেদের হালনাগাদ করতে না পারার ব্যর্থতা। এখন যেখানে ঘরে বসে মোবাইল স্ক্রিনেই মানুষ তাবৎ দুনিয়ার বিচিত্র সব ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট দেখতে পারছে, সেখানে বলিউড এমন নতুন কিছু দিতে পারছে না যার জন্য সাধারণ দর্শকেরা সিনেমা হলে ভিড় জমাবেন। ফলে ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে বলিউডের মাসালা মুভির বাজার।
ভারতীয় ফিল্ম ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ মনে করেন, বিশবাইশ ছিল বলিউডের জন্য বিপর্যস্ত হওয়ার বছর। তাঁর দাবি, গেল বছর ১টি ছবি হিট করলে, তার বিপরীতে ১০টি ছবি বক্স অফিসে ফ্লপ করেছে। হিট-ফ্লপের এই ভারসাম্যহীন অনুপাত বলিউডের জন্য অশনিসংকেত।
তবে কি বলিউড তার সিংহাসন হারাতে বসল? বক্স অফিসের হিসাব আপাতত সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। একমাত্র বলিউডের পরিবর্তনের পালে জোর হাওয়া লাগলেই হয়তো সেই পরিণতি এড়ানো যেতে পারে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে ‘ভালোবাসা পদক’, যা ভালোবাসা দিবস উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে যায়যায়দিন ও ইষ্টিশন কমিউনিকেশন্সের যৌথ আয়োজনে প্রদান করা হবে।
এ উপলক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি...
আসন্ন ঈদে মুক্তি পাচ্ছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত নতুন সিনেমা ‘জংলি’। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এর ফার্স্টলুক, পোস্টার ও টিজার। মুক্তিকে সামনে রেখে জোরেশোরে চলছে প্রচার। তারই অংশ হিসেবে এবার প্রকাশ করা...
চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্য মামুনের বাবা আবু মাসুদ আর নেই। আজ (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি বগুড়ায় নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।...
গত ৮ ডিসেম্বর নিজের জন্মদিনে ভক্তদের চমকে দিয়েছিলেন আফরান নিশো। বিশেষ এই দিনে তিনি দিয়েছিলেন নতুন সিনেমা ‘দাগি’র ঘোষণা। বলেছিলেন, ‘ক্যালেন্ডারে দাগ কাইটা রাখো, এই দাগির সাথে দেখা হবে ঈদে।’...
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে চালু করার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ...
বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এ দুজনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এ সময় মহাকাশ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করেন নরেন্দ্র মোদি ও...
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বিয়েবাড়িতে গান শোনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বল্লমের আঘাতে ময়না নামে ১২ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের...
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সময় আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এই ফোনালাপ হয়। তবে কী নিয়ে...
বিশবাইশে বলিউড: ১০ ফ্লপের বিপরীতে ১ হিটের করুণ গল্প
২০২০ সাল থেকে শুরু বলিউডের মন্দাভাব। করোনা মহামারির কারণে সেই সময় অবশ্য শুধু বলিউড নয়, বরং হলিউডসহ বিশ্বের তাবৎ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেই শুরু হয়েছিল হাহাকার। মাঝের ২০২১-এ সেই মন্দাভাব বেশ কিছুটা কাটিয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। ওই ধারাবাহিকতাতেই হিন্দিভাষী বলিউডের জন্য বিশবাইশ ছিল স্বরূপে ফেরার সুযোগ। কিন্তু উল্টো গেল বছরে বলিউডের বাণিজ্যের পালে লেগেছে ক্ষতির হাওয়া। এই বছরটায় বড় বড় সুপারস্টারদের ছবির বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া যেমন আছে, তেমনি আছে বিশাল বাজেটের মহাসমারোহে মুক্তি দেওয়া ছবির দর্শকদের কাছে পাত্তা না পাওয়ার গল্প।
বিশবাইশে বলিউড নিজের শক্তিশালী সত্তা হারিয়ে ফেলেছে অনেকটাই। আগে যেখানে দক্ষিণী, তেলেগু বা মালায়লম ছবি বলিউডে পাত্তাই পেত না, সেখানে এখন মার মার কাট কাট ব্যবসা করছে সেসব ছবিরই হিন্দি সংস্করণ। সালমান, শাহরুখ বা আমির খানদের রাজত্ব যেমন ভেঙে চুরমার, তেমনি অক্ষয় কুমার, হৃতিক রোশন বা সাইফ আলী খানের সূর্যও প্রায় অস্তগামী। দক্ষিণের কাছে কনটেন্টের মানে, গুণে ও গল্পে পেছাতে পেছাতে মরিয়া বলিউড ২০২২ সালে দক্ষিণী তরিকা অনুসরণ করারও চেষ্টা করেছে বেশ। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি খুব একটা। নকল দিয়ে কি আর অরিজিনালকে ঠেকানো যায়?
এক কথায়, বলিউডের এতদিনকার গল্প বলার চিরাচরিত স্টাইল ও উপস্থাপনার ধরনকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছে দর্শকশ্রেণি। ফলে ২০১৯ সালে যেখানে ভারতীয় সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সম্মিলিত আয়ের ৭৫ শতাংশ ছিল বলিউডের দখলে, সেখানে ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ৫১ শতাংশে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জোয়ার, হলিউডের ছবি মুক্তি এবং ভারতের অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাছেই জায়গা হারাচ্ছে বলিউড।
ভারতীয় মিডিয়া ও বিনোদন জগত নিয়ে কাজ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অরম্যাক্স মিডিয়ার দেওয়া হিসাব বলছে, ২০২২ সালের পুরোটা জুড়ে সব মিলিয়ে ভারতের তাবৎ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো মোট আয় করেছে ১০ হাজার কোটি রুপির কিছু বেশি। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে এই অংকটি ছিল ১০ হাজার ৯৪৮ কোটি রুপি। সেদিক থেকে দেখলে মনে হতেই পারে, আয় তো খুব একটা কমেনি! সমস্যা হলো, আগে যেখানে মোট আয়ে বলিউডি ছবির হিস্যা বেশি ছিল, এখন তা কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এতটাই যে, ভারতের সবচেয়ে বেশি আয় করা চলচ্চিত্রের তালিকায় মাত্র চার-পাঁচটি এখন বলিউডি ছবি। আবার একদম শীর্ষ স্থানেও জয়জয়কার দক্ষিণের। সবচেয়ে বেশি আয় করা দুটো চলচ্চিত্র হলো ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার টু’ (৪৩৪.৭০ কোটি রুপি) এবং ‘আরআরআর’ (২৭৪.৩১ কোটি রুপি)। তালিকার তৃতীয় স্থানটিও দখল করে নিয়েছে কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া হলিউডের ছবি ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’।
বলিউডি ছবির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয়ের তালিকায় রয়েছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র - পার্ট ওয়ান: শিবা’, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘দৃশ্যম টু’, ‘ভুল ভুলাইয়া টু’ এবং ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’। এর মধ্যে ‘ভুল ভুলাইয়া টু’ ও ‘দৃশ্যম টু’ মূলত এর আগের পর্বের ছবির কারণে বক্স অফিসে কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। দৃশ্যম টু তো সরাসরি রিমেক ছবি। আবার ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর বিষয়বস্তু নিয়েই আছে বেজায় বিতর্ক। বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত এই ছবিতে সত্যের অপলাপ হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর ‘ব্রহ্মাস্ত্র – পার্ট ওয়ান: শিবা’ বলিউডি ছবির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫৭ কোটি রুপি আয় করলেও, এর কনটেন্ট ও মেকিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ভারতীয় দর্শকদের মধ্যেই।
সমালোচকদের বক্তব্য, সুপারহিরো মুভি হিসেবে এর নির্মাণ বিশ্বমানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি। আর যে দেশে হলিউডের অ্যাভেঞ্জারস বা ব্যাটম্যান-সুপারম্যানের সর্বোচ্চ মানের ভিএফএক্স সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র মুক্তি পায় হরহামেশা, সেখানে দেশি সুপারহিরোদের দুর্বল চিত্রায়ন কে দেখতে চাইবে?
গেল বছর বলিউডে ফ্লপের স্বাদ পায়নি কে? যেসব সুপার স্টারেরা আগে ছবি হিট করানোর মূল কুশীলব ছিলেন, তাঁরা সবাই হোঁচট খেয়েছেন এ বছর। আয়ুষ্মান খুরানার তিনটি ছবিই ফ্লপ হয়েছে। প্রভাসের ‘রাধে শ্যাম’ সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি। সাইফ আলী খান ও হৃতিক রোশানের ‘বিক্রম ভেদা’ সিনেমাও দেখেনি অর্থের ঢল। ফ্লপের তালিকায় আরও আছে শহীদ কাপুরের স্পোর্টস ড্রামা ‘জার্সি’, টাইগার শ্রুফের ‘হিরোপান্তি ২’, অজয় দেবগনের ‘রানওয়ে ৩৪’, রণবীর সিংয়ের ‘৮৩’, অক্ষয় কুমারের ‘বচ্চন পান্ডে’, ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’, ‘রক্ষাবন্ধন’ ও ‘রামসেতু’। যে অক্ষয় কুমারের এক ছবি দিয়েই আগে বক্স অফিসে শত শত কোটি রুপির ব্যবসা হতো, সেই অক্ষয়ের চার ছবি মিলিয়ে আয় হয়েছে ২৩০ কোটি রুপির কিছু বেশি। আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ ও রণবীর কাপুরের ‘শমসেরা’ও পেয়েছে ফ্লপের তকমা।
অন্যদিকে দক্ষিণে শুধু হিট, সুপার হিট আর ব্লকবাস্টার হিট। ইয়াশের ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’, রামচরণ ও জুনিয়র এনটিআরের ‘আরআরআর’, কমল হাসানের ‘বিক্রম’, কার্থির ‘পোন্নিয়ান সেলভান ১’ বা কন্নড় সিনেমা ‘কানতারা’ শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বেই ব্যবসা করেছে ফাটিয়ে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বলিউডের এই পিছিয়ে যাওয়ার মূল কারণ ওটিটির যুগে নিজেদের হালনাগাদ করতে না পারার ব্যর্থতা। এখন যেখানে ঘরে বসে মোবাইল স্ক্রিনেই মানুষ তাবৎ দুনিয়ার বিচিত্র সব ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট দেখতে পারছে, সেখানে বলিউড এমন নতুন কিছু দিতে পারছে না যার জন্য সাধারণ দর্শকেরা সিনেমা হলে ভিড় জমাবেন। ফলে ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে বলিউডের মাসালা মুভির বাজার।
ভারতীয় ফিল্ম ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ মনে করেন, বিশবাইশ ছিল বলিউডের জন্য বিপর্যস্ত হওয়ার বছর। তাঁর দাবি, গেল বছর ১টি ছবি হিট করলে, তার বিপরীতে ১০টি ছবি বক্স অফিসে ফ্লপ করেছে। হিট-ফ্লপের এই ভারসাম্যহীন অনুপাত বলিউডের জন্য অশনিসংকেত।
তবে কি বলিউড তার সিংহাসন হারাতে বসল? বক্স অফিসের হিসাব আপাতত সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। একমাত্র বলিউডের পরিবর্তনের পালে জোর হাওয়া লাগলেই হয়তো সেই পরিণতি এড়ানো যেতে পারে।
লিখেছেন: অর্ণব সান্যাল, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন