বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই দিনটিকে ঘিরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে চ্যানেল আই। আজ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে বিশেষ 'সাময়িকী'। এতে থাকবে কবরীর জীবনের জানা-অজানা গল্প, তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের গান ও কিছু স্মরণীয় দৃশ্য। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেছেন আবদুর রহমান।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। তাঁর জন্মনাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্যপ্রভা পালের কন্যা কবরী বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রাম শহরেই। কৈশোরেই নৃত্য ও অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করে খুব দ্রুতই জায়গা করে নেন দর্শকদের হৃদয়ে।
চলচ্চিত্রে অভিষেক ও সাফল্য
মাত্র ১৪ বছর বয়সে কবরী সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন—সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ (১৯৬৪) ছিল তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র। এর আগেই, ১৩ বছর বয়সে তিনি মঞ্চে নৃত্যশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
পরবর্তী কয়েক দশকে কবরী হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিচ্ছেদ্য নাম। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘হীরামন’, ‘ময়নামতি’, ‘চোরাবালি’, ‘বিনিময়’, ‘পারুলের সংসার’, ‘আগন্তুক’, ‘সারেং বউ’, ‘সুজন সখী’, ‘দুই জীবন’, ‘দেবদাস’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘লালন ফকির’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘বেইমান’, ‘রংবাজ’, ‘দর্প চূর্ণ’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘উপহার’, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘কাচ কাঁটা হীরা’, ‘অধিকার’, ‘আমাদের সন্তান’, ‘জলছবি’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘বাঁশরি’, ‘বধু বিদায়’, ‘অরাধনা’, ‘গুণ্ডা’, ‘কত যে মিনতি’, ‘নীল আকাশের নিচে’ প্রভৃতি।
আন্তর্জাতিক পর্দায়ও ছাপ রেখেছেন কবরী
বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারতের কিংবদন্তি নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন কবরী। এছাড়া জহির রায়হানের নির্মিত উর্দু ভাষার সিনেমা ‘বাহানা’তেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
শিল্পী থেকে নেত্রী, কবরীর পথচলা
শুধু চলচ্চিত্র জগতেই নয়, কবরীর ছিল একটি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পাশাপাশি তিনি যুক্ত ছিলেন নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
১৯৭৮ সালে কবরী তাঁর ‘সারেং বউ’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর ২০১৩ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে।