সম্প্রতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি অনুদানের জন্য মনোনীত পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পৃথক দুটি তালিকা প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। যেখানে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে ‘অদ্বৈত’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান পেয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচক, সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি। তবে তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদানের স্ক্রিপ্ট (চিত্রনাট্য) বাছাই কমিটিরও একজন সদস্য।
অনুদানপ্রাপ্তদের নাম সামনে আসার পর থেকে বেশ কিছু প্রশ্নও সামনে এসেছে। সাদিয়া খালিদ রীতি বাছাই কমিটির একজন সদস্য হয়ে নিজেই কীভাবে অনুদান পান? এ ঘটনা কি ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ তৈরি করছে না? দায়িত্বশীলরা কি এই দায় এড়াতে পারেন?
এ বিতর্ক নিয়ে অবশ্য রীতির ভাষ্য ভিন্ন। ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে তিনি জানান, পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে আলাদা দুটি অনুদান কমিটি রয়েছে। দুই বিভাগের বাছাই কমিটিও আলাদা। সব মিলিয়ে ৬টি কমিটি; প্রত্যেক বিভাগে কমিটি রয়েছে ৩টি।
রীতির দাবি, তিনি যেহেতু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই কমিটির সদস্য, ফলে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে অনুদান পেতে তাঁর আইনগত কোনো বাধা নেই। কারণ, স্বল্পদৈর্ঘ্য কমিটির সদস্যরা পূর্ণদৈর্ঘ্য বিভাগে চিত্রনাট্য জমা দিতে পারেন, আবার পূর্ণদৈর্ঘ্য বিভাগের সদস্যরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের জন্য আবেদন করতে পারেন।
তিনি বললেন, ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে স্ক্রিপ্ট জমা দেওয়ার আগে এ বিষয়ে আমি নিজেও খোঁজ-খবর নিয়েছি। তখনই জেনেছি যে, স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে চিত্রনাট্য জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিগত কোনো বাধা নেই। কারণ, ওই বিভাগের কোনো কিছুর সঙ্গে আমি জড়িত নই। যাঁরা স্বল্পদৈর্ঘ্য বাছাই কমিটিতে ছিলেন তাঁরা স্ক্রিপ্ট পড়েছেন, তাঁরাই যাচাই-বাছাই করেছেন। আমি কোনো তদবির করিনি।’
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে রীতি বলেন, ‘যাঁরা আমাকে নিয়ে সমালোচনা করছেন, তাঁদেরকে বলব—আগে আপনারা অনুদানের নীতিমালা, আইন-কানুন জেনে-বুঝে তারপর সমালোচনা করুন। অযথা অভিযোগ তুললেই হয় না! অনুদানে অনেক অনিয়ম হয়েছে, সেটা রেখে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা যেটা নিয়মের ভেতরে হয়েছে, সেটা নিয়েই পড়ে থাকলাম। আমি অনেক লড়াই করেছি যেন নিয়ম মেনে যোগ্য প্রার্থীরা পূর্ণদৈর্ঘ্যে অনুদান পান। এই লড়াই ব্যর্থ হবে যদি আমরা ফিল্মের মানুষেরা নিজেদেরকেই দোষারোপ শুরু করি।’
এদিকে, পূর্ণদৈর্ঘ্য অনুদান কমিটির কার্যপরিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত কোনো সদস্য বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি অনুদান প্রাপ্তির জন্য পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট জমা প্রদান করে থাকলে তিনি অনুদানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং পরবর্তী কমিটি গঠন করার পূর্ব পর্যন্ত এ কমিটির কার্যক্রম বলবৎ থাকবে।’
তবে পৃথকভাবে ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য অনুদান কমিটি’র অস্তিত্ব রয়েছে কিনা—সেই তথ্য ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটাল স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
সাদিয়া খালিদ রীতি আরও জানান, আগামী নভেম্বরে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অদ্বৈত’র শুটিং শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সিনেমাটি ব্রিটিশ আমলের একটি গল্পে নির্মিত হবে। পরিচালনা করবেন তিনি নিজেই।
প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২টি চলচ্চিত্রকে মোট ১৩ কোটি টাকা সরকারি অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১২টি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ২০টি।