গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য সংগীতপ্রেমীদের দেয়ালে দেয়ালে ঘুরে বেড়িয়েছে। সেটা এমন—‘‘লিরিক্সে শুধু ‘শহীদ জিয়া’ থাকায় শেষ ৮ বছরে জেমসকে তার ‘বাংলাদেশ’ গানটি দেশের অনেক কনসার্টে গাইতে দেওয়া হয়নি। এমনি বললাম!’’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এমন অনেক অভিযোগ উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কণ্ঠরোধের নানা হুমকি-ধামকি ও কার্যক্রমের হদিস মিলছে বিগত সরকারের বিরুদ্ধে।
ঠিক তেমনই এক অভিযোগ আসে ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামের গানে। এখানে ব্যবহার করা বাক্য দুটি এমন—‘তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুন জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষণ, তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন।’
গানটির গীতিকার ও সুরকার কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী প্রিন্স মাহমুদ। বলা হচ্ছে, ‘শহীদ জিয়া’ শব্দ দুটির কারণে গানটি গাইতে নিষেধ করা হয়েছিল জেমসকে। বিষয়টি আদৌতে কতটা সত্য—জানতে চাওয়া হয়েছিল জেমসের ব্যান্ড নগরবাউলের কাছে।
জেমসের পক্ষে তাঁর ব্যবস্থাপক রুবাইয়াত ঠাকুর রবিন ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ‘এমন বাধার কথা আমরা কখনও শুনিনি। এগুলো আমরা জানি না। যারা লিখেছেন, তাদের জিজ্ঞেস করা উচিত। আমরা যদি বলতাম, তাহলে সেটা অভিযোগ হতো। আমরা তো কখনও বলিনি।’
রবিন আরও যোগ করে বলেন, ‘দেশ এখন ক্রান্তিলগ্নে আছে। ছোট-খাটো বিষয়গুলো বড় করে না দেখাই ভালো। দেশকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
বাংলাদেশের রক লিজেন্ড জেমস। চার দশকের ক্যারিয়ার অসংখ্য জনপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। তারই একটি হলো ‘বাংলাদেশ’। গানটিতে পুরো বাংলাদেশ যেমন উঠে এসেছে তেমনি আছে কীর্তিমানদের নামও।
গানের লিরিক্স:
তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজায় কবিতায়;
আছ সোহরাওয়ার্দী,শেরেবাংলা, ভাসানীর শেষ ইচ্ছায়।
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুনে জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষণ;
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন।
তুমি ছেলে হারা মা জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি;
তুমি জসীম উদদীনের নকশীকাঁথার মাঠ, মুঠো মুঠো সোনার ধূলি।
তুমি তিরিশ কিংবা তার অধিক লাখো শহীদের প্রাণ;
তুমি শহীদ মিনারে প্রভাতফেরীর ভাইহারা একুশের গান।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি।
আমার প্রাণের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
প্রাণের প্রিয় মাগো তোকে, বড় বেশি ভালোবাসি।তুমি কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা, উন্নত মম শির।
তুমি রক্তের কালিতে লেখা নাম, সাত শ্রেষ্ঠ বীর।
তুমি সুরের পাখি আব্বাসের দরদভরা সেই গান।
তুমি আব্দুল আলীমের সর্বনাশা পদ্মা নদীর টান।
তুমি সুফিয়া কামালের কাব্য ভাষায় নারীর অধিকার।
তুমি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শাণিত ছুরির ধার।
তুমি জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতানের রং-তুলির আঁচড়,
শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরীর নতুন দেখা সেই ভোর।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
জন্ম দিয়েছ তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি।
আমার প্রাণের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
প্রাণের প্রিয় মাগো তোকে, বড় বেশি ভালোবাসি।তুমি বিস্মৃত লগ্ন মাধুরীর জলেভেজা কবিতায়।
তুমি বাঙালির গর্ব, বাঙালির প্রেম, প্রথম ও শেষ ছোঁয়ায়।
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুন জ্বালা জ্বালাময়ী সে ভাষণ।
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন।
তুমি একটি ফুলকে বাঁচাব বলে বেজে ওঠো সুমধুর।
তুমি রাগে অনুরাগে, মুক্তিসংগ্রামে সোনাঝরা সেই রোদ্দুর।
তুমি প্রতিটি পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার অভিমানের সংসার।
তুমি ক্রন্দন, তুমি হাসি, তুমি জাগ্রত শহীদ মিনার।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি।
আমার প্রাণের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
প্রাণের প্রিয় মাগো তোকে, বড় বেশি ভালোবাসি।’