সেকশন

বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
Independent Television
 

দেখো শুকতারা আঁখি মেলি চায়…

আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৪ পিএম

মফস্বল শহর রংপুর। অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা শেষ। কিছু বই বিক্রি করে ৩৫ টাকা পেয়েছি। তাই নিয়েই ছুট পরিচিত এক দোকানে। তখন রেডিও-ক্যাসেটের যুগ। চাই রবীন্দ্রসংগীতের ক্যাসেট। শুনতে হবে সাদি মহম্মদের গান। বাড়িতে বাজবে সেই অসাধারণ কণ্ঠ, কী যে আনন্দ! সেসময় আমাদের মতো মফস্বল শহরের ছোট-বড় প্রায় সব বাড়িতেই গান শোনার তুমুল চল ছিল। টিভি থাকলেও এত চ্যানেল তো ছিল না। ইন্টারনেট তো সুদূর কল্পনাতেও নেই। আমাদের আনন্দ-বিষাদ কাব্যের অনেকটুকু জায়গাজুড়ে ছিল তাই রেডিও আর টেপরেকর্ডার। হিন্দি, আধুনিক বাংলা, ব্যান্ড—কী ছিল না তাতে! সব ছাপিয়ে রবীন্দ্রসংগীত আর সাদি মহম্মদ ছিলেন অনন্য।
 
কী কপাল আমার! যার গান শুনে রবীন্দ্রনাথ আপন হয়েছিলেন, অনেক বছর পরে এসে সেই সাদি স্যারের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হওয়ার, মুখোমুখি কথা বলারও সুযোগ এল। সুযোগ করে দিল মেয়ে। যেদিন প্রথম স্যারের সঙ্গে দেখা, মাথায় কিছু আসছিল না। ভাবছিলাম, দেখা হলে কী বলব? মুখে সালাম দিব, নাকি পা ধরে সালাম করব? আরও অনেক কিছু। মেয়েকে গান শেখানোর উদ্দেশ্যে সাদি স্যারের দরজায় হাজির হয়েছিলাম। শেখান বলতে, উনি আসলে গান ভালোবাসতে শেখান। সেই শুরু। এর পরের দুই বছর, তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তিনি যেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেরই অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। মেয়ের গান শেখার বদৌলতে, সাদি স্যারের সঙ্গে আমাদের সব মায়েদেরও একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমরা স্যারকে মাথায় করে রাখতাম। মনে হতো একজন জীবন্ত কিংবদন্তির সামনে বসে গান শুনছি। কী ভাগ্য!

তাঁর ক্লাসে শুধু কি গান; কত গল্প, কত স্মৃতিচারণ যে ছিল! সেখানে তাঁর কণ্ঠেই শুনেছিলাম মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের পরিবারের অনন্য আত্মত্যাগের কথা, বুয়েট ছেড়ে গানের প্রেমে পড়ে কীভাবে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন, আরও কত কী! ঘরের খবর, হাঁড়ির খবর বিনিময় তো থাকতই। 
 
রবীন্দ্রসংগীত আর সাদি মহম্মদ ছিলেন অনন্য। ছবি: সংগৃহীত

কারও কোনো উপলক্ষ্য লাগতো না তাঁর বাসায় যাওয়ার, কালের সাক্ষী ওই বাড়ির দরজা কখনও বন্ধ হতো না। সবার অবাধ যাতায়াত ছিল। যেতে চাইলে চারতলা পর্যন্ত বিনা বাধায় ঢুকে যাওয়া যেত। ছাত্র-ছাত্রীদের, ছোট বাচ্চাদের ভীষণ ভালোবাসতেন। কারও চুল এলোমেলো, উনি চুল ঠিক করে দিতেন। তাড়াহুড়ো একদম পছন্দ করতেন না। কেউ জোরে হাঁটলেই বলে উঠতেন, ‘এই তুই এত জোরে হাঁটলি কেন? এমন তাড়াহুড়া করলে আমার বুক ধড়ফড় করে।’ 

গানের ক্লাস তো ছিলই, কতবার যে তিনি আমাদের ডেকে খাইয়েছেন। উনি রান্না করলেই আমাদের দাওয়াত! বাচ্চাদের কারও জন্মদিন হলে তো কথাই নেই, যেন আনন্দের হাট বসে যেত সেদিন। সেসব দিন যে আর ফিরে আসবে না, এই দুঃখ কোথায় রাখি! 

স্যার বড্ড আবেগী মানুষ ছিলেন; প্রায়ই বলতেন, ‘আমার কিছুই ভালো লাগে না। কেন যে বেঁচে আছি!’ 

একদিন বলেছিলাম, ‘‘স্যার, একদিন মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলবেন, শুনব। উত্তরে স্যার বলেছিলেন, ‘গল্প আর কী বলব! গল্প তো নাই। আছে শুধু স্মৃতি, আর দুঃখ।’’’ 

দুই ভাই—সাদি ও শিবলী। ছবি: সংগৃহীত

তাঁদের পরিবার সম্পর্কে, বিশেষ করে তাঁদের দুই ভাই সম্পর্কে তো এই দেশের সবাই জানে। দুই ভাই-ই অসাধারণ। নাচ নিয়ে কিংবদন্তি হয়ে আছেন শিবলী স্যার, গানে সাদি স্যার। এমন পরিবার এ দেশে খুঁজে পাওয়াই তো মুশকিল। শিবলী স্যার যেমন মুখের ওপর সব বলে দেন, খারাপ-ভালো দুটোই; তাঁর ভেতর কোনো ভণিতা নেই, এতে কেউ তাঁকে খারাপ বললেও তাঁর যায় আসে না! অন্যদিকে, সাদি স্যার ছিলেন খানিকটা উলটো; তাঁকে কেউ কিছু বললে মন খারাপ করে ফেলতেন, নিজের ভেতরে কুঁকড়ে যেতেন। কারও কথায় কষ্ট পেলে লুকিয়ে রাখতেন। যেদিন অসুস্থ থাকতেন, বা মন খারাপ থাকতো, আমরা বুঝতে পারতাম। মনে হতো, সেদিন যেন আরও বেশি গান গাইতে চাইছেন, গানেই আশ্রয় খুঁজছেন।
 
মাঝেমাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। শেষদিকে স্যারের দাঁড়াতে কষ্ট হতো, কাঁপতেন। দুই হাঁটুতে অপারেশন করালেন, যেন পায়ের শক্তি দিয়ে দাঁড়াতে আর হাঁটতে পারেন। এখন তো মনে হয়, অপারেশন না করলেই হয়তো ভালো হতো।

স্যার যেদিন মারা গেলেন, সেদিনের ওই মুহূর্তগুলো এখনও অবিশ্বাস্য লাগে। মেসেঞ্জারে মেসেজ পেলাম, সাদি স্যার আর নেই। বিশ্বাস করলাম না, যে মেসেজ পাঠিয়েছে উল্টো তাঁকে ফোন দিয়ে বকা দিলাম যে আপনারা এসব ভুয়া নিউজ কেন ছড়ান? উনি বললেন, ‘আপা, আপনি টিভি দেখেন।’ কাঁপা-কাঁপা হাতে রিমোট চাপলাম। অবিশ্বাস্য! কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। মেয়ে জিজ্ঞেস করছে, কাঁদছ কেন? কিন্তু আমার মুখে কথা ফুটছে না। কীভাবে মেয়েকে এই সংবাদ দেব? কীভাবে বলব—প্রিয় সাদি স্যারের সঙ্গে আর কখনোই দেখা হবে না তার। ধাতস্থ হয়ে আধঘণ্টা পর যখন বললাম মেয়েও বিশ্বাস করতে চাইছিল না। 

আমার দশে পড়া মেয়ের এখনও চাওয়া, স্যারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যাক। হয়তো হঠাৎ করে আবার ডাকবেন, বলবেন, ‘তোর চুলের ক্লিপটা ঠিক করে দিই এভাবে, এলোমেলো আসবি না। তোরা আবার ওই গানটা গা তো।’ সুন্দর না হলেও বলবেন, ‘বাহ! খুব সুন্দর হয়েছে। বাসায় আরেকটু প্র্যাকটিস করিস।’ 

গানের অনুষ্ঠানে সাদি। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর জীবনের যে ব্যাপ্তি, তা ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা, সাহস কোনোটাই আমার নেই। কিন্তু এটুকু বলতেই পারি, শিল্পী হিসেবে তো বটেই, স্যার মানুষ হিসেবেও যে কত বড়মাপের ছিলেন, এখনকার অসুন্দর, অবিশ্বাসের যুগেও তিনি যে কত বড় মহীরুহ ছিলেন—তা তাঁর আশপাশের লোকজন প্রতিনিয়তই টের পাচ্ছেন।
 
সাদি মহাম্মদকে এই রাষ্ট্র কি দিতে পারতো-না পারতো, সেই আলোচনায় যাব না। নিজেরই ভীষণ লজ্জা লাগছে এটা লিখতে গিয়ে, স্যারও আলোচনা করতে নিষেধ করতেন। আমরা তো সেই অভাগা জাতি, যারা জীবিত থাকতে বীরদের মর্যাদা, যোগ্য সম্মান দিতে জানি না। শিবলী স্যার কিংবদন্তি শিল্পী। অথচ কোনো নাচের অনুষ্ঠান করতে গেলে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হিমশিম খান, যেন তাঁর একারই দায়িত্ব নাচকে এগিয়ে নেওয়ার। রাষ্ট্র, সমাজের কোনো দায় নেই! টিভি চ্যানেল বা কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায় সেখানে নাচ ঠিকই আছে, কিন্তু কোনো নৃত্যশিল্পী নেই। মডেল দিয়েই কাজ চলে যায়। শিল্প, শিল্পীর চেয়ে গ্ল্যামারের রমরমা দাপট। আর আমরা হা-হুতাশ করে মরি সংস্কৃতির পড়ন্ত দশা নিয়ে। কী হিপোক্রেসি!

স্যার মারা যাওয়ার আগে আগে বাচ্চাদের ‘দেখো দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলি চায়...’ গানটি শেখাচ্ছিলেন। গানটা শেষ হওয়ার পর বললেন, ‘তোরা কি শুকতারা দেখেছিস কখনো?’ বাচ্চারা জানাল দেখেনি, জিনিসটা কী তারা বোঝেও না। স্যার এরপর সব মায়েদের বললেন, ‘আজকে সন্ধ্যায় বাচ্চাদের শুকতারা দেখাবে।’ এরপর শুকতারা নিয়ে বাচ্চাদের বুঝিয়েও বললেন। পরে বললেন, ‘তোরা শুকতারা দেখে এসে আমাকে বলবি।’ এর দিনকয়েকের মাথায়ই তিনি মারা যান।

এখনও প্রায় সন্ধ্যায় স্যারের গান শুনি। মনে হয়, স্যার কি শুকতারা হয়ে আছেন? আমাদের দেখছেন, আর হাসছেন? 

আজ জন্মদিনেও কি আপনি শুকতারা হয়ে এসেছেন, স্যার? তবে আকাশ পানে চেয়ে বলি, ‘শুভ জন্মদিন, স্যার!’

প্রতি ঈদেই গান পরিবেশন করে আলোচনায় থাকেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। এবার তাঁর ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ! আসন্ন রোজার ঈদে তার নতুন গানের অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে না। ২০১৬ সালের ঈদুল আজহায়...
এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপনকে আরও বিশেষ করতে আয়োজন করা হচ্ছে ‘চাঁদ রাতে’র আনন্দ অনুষ্ঠান। যা প্রথমবারের মতো করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আগামী ৩০ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি-এর...
২০০৭ সালে বলিউডের মুক্তি পায় এমরান হাশমি অভিনীত ‘আওয়ারাপান’। সিনেমার মুক্তির আগেই তুমুল শোরগোল ফেলে ‘তেরা মেরা রিস্তা’ গানটি। এমরানের জন্য এটি গেয়েছিলেন পাকিস্তানি গায়ক মুস্তফা জাহিদ। এরপর ‘আশিকি...
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অ্যাঞ্জেল নূর সোশ্যাল মিডিয়ায় কাভার গান গেয়ে নেটিজেনদের নজরে আসেন। কাভার গানের পাশাপাশি তাঁর লেখা বেশকিছু জনপ্রিয় গানও রয়েছে। ক’দিন আগেই খবরের শিরোনাম...
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান মুখোমুখি দাঁড় করানোর বিষয় নয়, বরং ধারাবাহিকতার। এমন বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহম্মদ খান। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালরাতে...
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরোচিত কালো অধ্যায়। ইতিহাসের সেই বর্বরোচিত কালোক্ষণ স্মরণে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়ে ডা. খাস্তগীর স্কুলের সামনে বোধন আবৃত্তি পরিষদ...
চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে নগরীর চটেশ্বরী সড়কে এই মিছিল হয়। 
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.