হলিউডে দক্ষিণ কোরিয়ার উত্থানের প্রতীক হয়ে উঠেছে নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ ‘স্কুইড গেম’। বিশ্বজুড়ে এখন লাখ লাখ ভক্ত সিরিজটির শেষ কিস্তি উপভোগ করছেন। আর্থিক সংকটে থাকা কয়েকজন খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে কাল্পনিক এই সিরিজ। যেখানে প্রতিটি রাউন্ডে পরাজিতদের হত্যা করা হয়।
২০২১ সাল থেকে স্কুইড গেম তার বাহারি ক্যান্ডি রঙের সেট এবং পুঁজিবাদ ও মানবতা সম্পর্কে বিষণ্ণ বার্তা দিয়ে দর্শকের মন কেড়ে নিয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুন) মুক্তিপ্রাপ্ত তৃতীয়, তথা শেষ কিস্তি দেখে ভক্তরা যেন বাস্তবে ফিরে গেলেন। দক্ষিণ কোরিয়ানদের কেউ কেউ সিরিজটিতে নিজেদের সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন দেখছেন, যা এই ডিস্টোপিয়ান সিরিজ নির্মাণে পরিচালক হোয়াং দং-হিউককে বেশ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
ইউটিউবে তৃতীয় কিস্তির একটি ভিডিও ক্লিপের মন্তব্যঘরে এক দর্শক লিখেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে স্কুইড গেম-৩ কোরিয়ান জনগণের প্রকৃত অনুভূতি এবং অন্তর্নিহিত অপক্ব চিন্তাভাবনা ফুটিয়ে তুলেছে।’
যোগ করে বলেন, ‘এটি (স্কুইড গেম) বাস্তবতাকে এত সুন্দরভাবে প্রতিফলিত করে যে, বাস্তব জীবনে, কর্মক্ষেত্রে নির্মম লোকজনে ভরা—যারা আপনাকে প্রতি মুহূর্তে দমন করার জন্য প্রস্তুত। সিরিজটি বেশ দক্ষতার সঙ্গে তা ফুটিয়ে তোলে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজব্যবস্থায় তীব্র প্রতিযোগিতা এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের পটভূমিতে তৈরি হয়েছে স্কুইড গেম, যেখানে মানুষ এত বেশি চাপে থাকে যে সন্তান নেওয়ার ইচ্ছেও তারা হারিয়ে ফেলেন, আর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা তো একজন ব্যক্তির ‘বাঁচা-মরার’ নির্ণায়ক!
সিরিজটির বিভিন্ন চরিত্র, যার মধ্যে রয়েছে একজন মাসিক বেতনভুক্ত, একজন অভিবাসী কারখানার কর্মী ও একজন ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারক—এই চরিত্রগুলো সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ার পরিচিত সমাজ থেকে উঠে আসা।
প্রধান চরিত্র সিওং গি-হুন একজন গাড়ি কারখানার শ্রমিক, যে কিনা কারখানা থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর ধর্মঘটে অংশ নেয়। চরিত্রটির পটভূমিও বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে: ২০০৯ সালে স্যাংইয়ং মোটর কারখানার শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন, যা কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শ্রমিক আন্দোলনের একটি।
জিওং চিওল সাং নামের এক সিনেপ্রেমী তাঁর স্কুইড গেম-৩ রিভিউয়ে লিখেছেন, ‘সিরিজটি কাল্পনিক হতে পারে, কিন্তু এটি বাস্তবতার চেয়েও বেশি বাস্তবসম্মত বলে মনে হয়।’
তিনি বলেন, ‘অনিশ্চিত শ্রম, যুবকদের বেকারত্ব, পরিবার প্রথায় ভাঙন—এগুলো কেবল গল্পের কলাকৌশল নয়, বরং আমরা প্রতিদিনই এমন সব সংগ্রামের মুখোমুখি হই।’
ব্লকবাস্টার এই সিরিজের শেষ কিস্তির মুক্তি উদযাপন উপলক্ষে শনিবার (২৮ জুন) রাতে সিউলের রাস্তায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন হয়। যেখানে বিশালাকার কিলার ডল, ট্র্যাকস্যুট পরা কয়েক ডজন মুখোশধারী গার্ড এবং সিরিজটির অন্যান্য নকশাগুলো নজর কেড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের মতে, স্কুইড গেম বিশ্বমঞ্চে কে-ড্রামার সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং এই জনপ্রিয় সিরিজ, বিটিএস এবং অস্কারজয়ী ‘প্যারাসাইট’কে পুঁজি করতে চান, ‘কে-কালচার’ রপ্তানি করতে চান বিশ্বব্যাপী।
সূত্র: বিবিসি