আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা সিনেমার দৃশ্যপট বদলে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই কিংবদন্তি নির্মাতার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। একাধারে তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক ও লেখক।
ক্যারিয়ারে ৩৫টিরও বেশি ছবি পরিচালনা করেছেন সত্যজিৎ। ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর চলচ্চিত্র-যাত্রা।
এই নির্মাতা যখন তাঁর প্রথম ছবি পথের পাঁচালী পরিচালনা করতে গিয়েছিলেন, তখনও তিনি সেই ছবির জন্য আলাদা করে চিত্রনাট্য লেখেননি! শুটিং সেটে সবাই রেডি শুটিংয়ের জন্য। সহ-পরিচালক এসে তাঁর কাছে চিত্রনাট্য চাইলে তিনি বলেন, ‘স্ক্রিপ্টের (চিত্রনাট্য) কী দরকার? আমি যা বলব ওরা তাই করবে, বলবে। আলাদা করে স্ক্রিপ্টের কী দরকার?’
পরিচালকের এই কথা শুনে সবাই অবাক! তারপর সত্যজিৎ বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে পেন (কলম) আর কাগজ নিয়ে এসো। আমি লিখে দিচ্ছি।’ সেই মতো তিনি ছোট কাগজের টুকরোতে একটা করে দৃশ্য এঁকে দিলেন এবং কে কী কথা বলবে, তা তখনই বসে লিখে দিলেন। এই চিরকুটগুলোই ছিল পথের পাঁচালীর চিত্রনাট্য। সবাই মাথায় পুরো বিষয়টি এমনভাবে গেঁথে নিতেন যে তাঁর কোনো কিছুরই দরকার পড়তো না।
সামাজিক বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত পথের পাঁচালী ছিল প্রথম কোনো চলচ্চিত্র, যা আন্তর্জাতিকভাবে নজর কেড়েছিল। ১৯৫৫ সালে এটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, কান উৎসবে শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়াও সিনেমাটিকে সর্বকালের সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি বলেও বিবেচনা করা হয়।
এরপর একে একে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন ‘পরশ পাথর’, ‘জলসা ঘর’, ‘অপুর সংসার’, ‘অভিযান’, ‘মহানগর’, ‘নায়ক’, ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘অশনি সংকেত’, ‘জন অরণ্য’, ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘গণশত্রু’, ‘আগুন্তুক’-এর মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র।
জাতীয় পুরস্কারের চেয়ে আন্তর্জাতিকভাবেই বেশী স্বীকৃতি পেয়েছেন সত্যজিৎ রায়। আজীবন সম্মাননাস্বরূপ অ্যাকাডেমি পুরস্কার (অস্কার) অর্জন ছাড়াও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন তিনি, যা তাঁর আগে একমাত্র চার্লি চ্যাপলিনই পেয়েছিলেন। ফ্রান্সের সরকার ১৯৮৭ সালে সত্যজিৎকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার ‘লেজিওঁ দনরে’ প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি অর্জন করেন ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে পেয়েছিলেন ভারতরত্ন। এরপর মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।