ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মুম্বাইয়ে গত সোমবার রাতে একটি বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অন্তত ৩৯টি ফ্ল্যামিঙ্গো পাখির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ঘটনার সময় এমিরেটস এয়ারলাইনসের ওই ফ্লাইটটিতে ৩০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল। তবে যাত্রীদের নিয়ে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে। এ ঘটনা ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। পরিবেশবাদীরা এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য মুম্বাইয়ে অতিরিক্ত স্থাপনা নির্মাণকে দায়ী করেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাখিগুলো তাদের চলার স্বাভাবিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে ফ্লাইটের সামনে চলে এসেছিল কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়।
প্রতিবছর নভেম্বরের দিকে হাজার হাজার ফ্ল্যামিঙ্গো পাখি মুম্বাইয়ে আসে। এসব পাখি শহরটির জলাভূমিকে কয়েক মাসের জন্য নিজেদের আবাসস্থল করে তোলে।
ফ্ল্যামিঙ্গো পাখিদের সংক্ষিপ্ত অবস্থান স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি বহুল প্রত্যাশিত ঘটনা। আকর্ষণীয় এসব গোলাপি অভিবাসী পাখি দেখতে ও ছবি তুলতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়।
দুবাই থেকে মুম্বাইগামী ফ্লাইটটি ‘অবতরণ করার সময় পাখির আঘাতের সম্মুখীন হয়’ বলে স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এমিরেটস এয়ারলাইনসের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করেছে এবং সকল যাত্রী ও ক্রু কোনো আঘাত ছাড়াই নেমে গেছে। তবে দুঃখজনকভাবে, বেশ কয়েকটি ফ্ল্যামিঙ্গোর মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছে এমিরেটস।’
মুম্বাইয়ের শহরতলির ঘাটকোপারে একদল শিশু রাস্তায় পাখিদের মরদেহ দেখতে পাওয়ার পর সোমবার গভীর রাতে ফ্লেমিংগোর মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। মঙ্গলবার সকালেও বেশ কিছু পাখির রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়।
বন কর্মকর্তা অমল ভাগবত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সোমবার গভীর রাতে ২৯টি পাখির মরদেহ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার সকালে পাওয়া গেছে আরও ১০টি মরদেহ।’
পরিবেশবিদরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছে, পাখিরা কাছাকাছি একটি অভয়ারণ্যের দিকে উড়ে যাওয়ার সময় তাদের পথ পরিবর্তন করার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
স্ট্যালিন ডি নামের একজন পরিবেশবাদী এলাকায় বিদ্যুতের তারগুলোকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন৷ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে স্ট্যালিন বলেন, ‘সম্ভবত ফ্ল্যামিঙ্গোরা এই উচ্চ বিদ্যুতের তারগুলো অতিক্রম করার চেষ্টা করছিল এবং বিমানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে।’
ঘটনাটি মুম্বাইয়ের উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি নির্মাণ কার্যক্রম ঘিরে নতুন সমালোচনার জন্ম দিল। পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ের উপকূলীয় এলাকায় একটি নির্মিতব্য বিমানবন্দর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন- যেটি ফ্ল্যামিঙ্গো দেখার জন্য বিখ্যাত আরেকটি এলাকা।
পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, বিমানবন্দরের উপস্থিতি এবং সেখানে নির্মাণ ও যানজটের কারণে আরও ফ্লেমিঙ্গোর মৃত্যু হতে পারে।