ঘটনাবহুল বছর ২০২৪। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই প্রকৃতির বিরূপ আচরণ দেখা যাচ্ছে হরহামেশা। তার ওপর সাগরে এল নিনোর প্রভাবে এই বছরটায় যেন প্রকৃতির একটু বেশিই রুদ্রমূর্তি দেখেছে বিশ্ব।
বছরের শুরুর দিকে বায়ুদূষণ, এরপর গ্রীষ্মকালে দফায় দফায় তাপপ্রবাহে নাজেহাল হয়েছে মানুষ। তবে এই বছরে সবচেয়ে বেশি যে দুর্যোগটি বিশ্ববাসীকে ভুগিয়েছে, তা হলো অতিবৃষ্টি ও বন্যা।
বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ অঞ্চলে এবার প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হতে দেখা গেছে। আর এই বৃষ্টি সৃষ্টি করেছে বন্যার। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র দেশগুলো। এছাড়া বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় ও দাবানল দেখেছে বিশ্ব। এসব দুর্যোগে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বীমা সংস্থা সুইস রে-এর তথ্য অনুসারে, সারা বিশ্বে ২০২৪ সালে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৩১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা আগের ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।
বিশচব্বিশের কয়েকটি বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ
সুপার টাইফুন ইয়াগি
সেপ্টেম্বরের শুরুতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশে আঘাত হানে সুপার টাইফুন ইয়াগি। এটি ২০২৪ সালে এশিয়া মহাদেশে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়। টাইফুন ইয়াগি (ফিলিপাইনে এন্টেং নামে পরিচিত) চীন, ফিলিপাইন, লাওস, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রভাব ফেলেছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল ভিয়েতনামে। ইয়াগি ছিল ৭০ বছরের মধ্যে ভিয়েতনামে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এর প্রভাবে মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধস দেখা দিয়েছিল দেশটিতে। ভিয়েতনামে প্রায় ৩০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড়ে।
ইয়াগিতে মোট প্রায় ৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ভিয়েতনামে ৩০০, মিয়ানমারে ২২৬, লাওসে ৪, থাইল্যান্ডে ৪২ এবং ফিলিপাইনে ২১ জন মানুষের মৃত্যু হয়। ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার কারণে অধিকাংশ মৃত্যু হয়। নিখোঁজদেরও মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
ইয়াগিতে ভিয়েতনামে ২ লাখ ৩৭ হাজার, চীনে ৫০ হাজারেরও বেশি, ফিলিপাইনে ১২ হাজার এবং থাইল্যান্ডে ৮ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট অর্থনৈতিক ক্ষতি ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে জানানো হয়।
এশিয়ায় বন্যা
বছরের বিভিন্ন সময় এশিয়া মহাদেশের দেশগুলো অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার কবলে পড়ে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশসহ প্রায় বেশির ভাগ দেশই বন্যার কবলে পড়ে।
এল নিনোর প্রভাবে এপ্রিল ও মে মাসে এশিয়া মহাদেশের আফগানিস্তান, ইরান ও পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এল নিনো বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্বিগুণ করেছিল ওই সময়। এপ্রিলের মাঝমাঝি থেকে শুরু হওয়া তীব্র বৃষ্টিপাত চলে মে মাসেও। এতে আকস্মিক বন্যায় আফগানিস্তানে কমপক্ষে ৫০০ জন, পাকিস্তানে ১২৪ জন এবং ইরানে ১৮ জন নিহত হয়। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলের খেত।
নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের শুরুর দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়। থাইল্যান্ডে প্রায় ৬ লাখ ৬৪ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৫২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়। এ অঞ্চলে মাত্র পাঁচ দিনে ছয় মাসের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়।
বন্যায় থাইল্যান্ডে অনেক স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হতে হয়েছিল। ২ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ৪৯১টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৪ হাজার ৩৫৪ জন উদ্বাস্তু এখনও রয়ে গেছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দেশটির পার্লামেন্টে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করতে আনুমানিক ২২৪ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে তাদের।
এদিকে আগস্টে বাংলাদেশ ও ভারতেও অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে বেশকিছু প্রাণহানিও হয়ও। বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও পঞ্চগড় জেলা এবার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে।
উত্তর আমেরিকায় দাবানল
২০২৪ সালের জুন–জুলাইয়ে মারাত্মক দাবানল যুক্তরাষ্ট্রের খরাকবলিত পশ্চিমাঞ্চল ও কানাডায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এতে বিশাল বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। অনেক লোককে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এটি ছিল গত ৫০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাবানলের মৌসুম। উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের দাবানল সাধারণত বসন্ত থেকে শরৎ ঋতু পর্যন্ত চলে, যদিও এটি অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়।
আবার কানাডায় ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে ২০২৩ সালে নিভে যাওয়া দাবানলের মধ্যে প্রায় ১৫০টি পুনরায় জ্বলে ওঠে। মে মাসের প্রথম দিকে আলবার্টা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও ম্যানিটোবায় বড় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। এর পরেই সাসকাচোয়ান, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল এবং নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরে দাবানল দেখা যায়। আলবার্টা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, সাসকাচোয়ান ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি পুড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার এসব দাবানলের ধোঁয়া মেক্সিকো ও ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।
মায়োতে ঘূর্ণিঝড় চিডোর তাণ্ডব
১৪ ডিসেম্বর আফ্রিকা মহাদেশসংলগ্ন ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল মায়োতে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় চিডো। ওই অঞ্চলে ৯০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ছিল এটি। ঘূর্ণিঝড় চিডোর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটারের বেশি। এতে তছনছ হয়ে যায় ফ্রান্সশাসিত এই দ্বীপটি। সেখানকার টিনের ছাউনির ঘরগুলো বলতে গেলে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
এছাড়া আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকেও আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় চিডো। এতে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় পেমবা শহরের প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে হঠাৎ করে বন্যা দেখা দেয়। উপড়ে যায় গাছপালা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাড়িঘর।
তাপপ্রবাহ
উষ্ণতায় রেকর্ড গড়েছে ২০২৪ সাল। গত জুন মাস ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম জুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, উষ্ণতম বছর হিসেবে ২০২৩ সালকে ছাড়িয়ে গেছে ২০২৪। এটি এখন ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনো—এই দুইয়ে মিলে চলতি বছরের তাপমাত্রাকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বিশ্বজুড়ে পরিবর্তিত জলবায়ু এরই মধ্যে ভয়ানক পরিণতি ডেকে এনেছে। ২০২৪ সালে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালনের সময় ভয়াবহ গরমে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ভারতের নয়াদিল্লিতে লম্বা সময় ধরে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ চলে। অতিরিক্ত গরমে সেখানে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। গ্রিসেও ২০২৪ সালে গরমের কারণে বেশ কয়েকজন পর্যটক মারা যান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্লাইমেট মনিটরিং সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের জুন মাসটা ছিল এ যাবতকালে ইউরোপের সবচেয়ে উষ্ণ জুন মাস।
বিশচব্বিশে ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ চলেছে। কোনো কোনো দেশে দাবানলও ছড়িয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশ হচ্ছে গ্রিস, ইতালি ও স্পেন। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। রোম, ফ্লোরেন্স ও বোলোগনাসহ ইতালির ১৬টি শহরে তাপপ্রবাহের রেড অ্যালার্ট জারি করাও হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জুলাইয়ে তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এই সতর্কতার আওতায় ছিলেন ১১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিনি, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশেও। অনেকক্ষেত্রে তাপমাত্রা ছাড়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও। ভারতের একাধিক রাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা যায়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও হয়েছিল একই পরিস্থিতি।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের এপ্রিল ও মে মাসে একটি বড় এবং দীর্ঘায়িত তাপপ্রবাহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ অংশকে প্রভাবিত করেছে। রেকর্ড সৃষ্টিকারী প্রচণ্ড এ তাপপ্রবাহ বাংলাদেশ থেকে শুরু করে পূর্ব ভারত এবং চীনের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকতে দেখা যায়।
২০২৪ সালের এপ্রিল থেকেই বাংলাদেশের কিছু জেলায় তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে। এরপরের দুই সপ্তাহে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশেই। যশোরে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
এপ্রিল ও মে মাস সাধারণত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য উষ্ণতম মাস। কিন্তু ২০২৪ সালে তাপমাত্রা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল।
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় রিমাল
গত ২৬ মে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানার পর থেকে প্রায় ৫০ ঘণ্টা পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় উপকূলীয় জেলাগুলোতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রিমাল উপকূলে আঘাত হানার সময় এর কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়, রাত দেড়টায়। তখন ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের ২৯ মের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের ৭ জেলায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া উপকূল ও এর আশপাশের ১৯টি জেলায় প্রায় পৌনে ২ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৩৩৮টি ঘরবাড়ি। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮টি ঘরবাড়ি। আর এই ঝড়ে দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ। এতে সুন্দরবনে প্রায় ১৩৪টি হরিণের মৃত্যু হয়।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত ও অতিবৃষ্টিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে দেশের কৃষিতেও। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের করা ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৪৮ জেলার কৃষিতে রিমালের প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৩টি জেলা। রিমালের আঘাতে ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়।
সরকারি হিসাবে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে উপকূলীয় এলাকার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়, আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘরবাড়ির।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। এর প্রভাবে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। রাতভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয় কলকাতার বিভিন্ন অংশ, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর এবং সুন্দরবনসহ বিভিন্ন অঞ্চল।
পাপুয়া নিউগিনির ভূমিকম্প ও ভূমিধস
২০২৪ সালের মে মাসে ওশেনিয়া অঞ্চলের দীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউ গিনিতে ভূমিকম্প ও এর প্রভাবে মারত্মক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছিল। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এঙ্গা প্রদেশে ভূমিকম্প ও ভূমিধসে ৬৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে অন্তত ছয়টি গ্রাম। অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
ব্রাজিলের বন্যা
মে মাসে ল্যাটিনের দেশ ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চল মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধসের সম্মুখীন হয়। এতে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়। ৩০ হাজার লোককে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়। প্রায় ৩৭৩ জন নিখোঁজ হয়। এতে ৫ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি বা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল।
কেরালার ভূমিধস
২০২৪ সালের ৩০ জুলাই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালায় ভূমিধসে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যু হয়। প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। ছালিয়ার নদীতে ১৬ জনের মরদেহ পাওয়া যায়। নিখোঁজ থাকে শতাধিক।
তথ্যসূত্র: আইএফআরসি, সেন্টার ফর ডিজাস্টার ফিলানথ্রপি, রিফরেস্টার ডটকম, বিবিসি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্লাইমেট মনিটরিং সার্ভিস, ওয়ার্ল্ড মেটারোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউপিআই ডটকম