বায়ুদূষণের কারণে তীব্র হচ্ছে বজ্রপাত। দেশের বাতাসে ধুলা, সমুদ্রের লবণ, সালফেট ও কার্বন-কণা বাড়ছে। বাতাসে দুই দশমিক দুই পাঁচ আকারের বস্তুকণার মাত্রাও বেশি জমছে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ার কারণেও ঘনঘন হচ্ছে বজ্রপাত। এপ্রিল ও মে মাসে বায়ুদূষণ বেশি হলে বজ্রপাতের তীব্রতাও বাড়ে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
দেশের আকাশে সাধারণত দেখা মেলে তিন ধরনের বজ্রবিদ্যুৎতের। বিশ্বের ৩৭ ভাগ বজ্রপাত হয় বাংলাদেশে। এই বদ্বীপে বছরে বজ্রপাত হয় ৮০ থেকে ১২০ দিন। বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ২০২৪ সালে বজ্রপাতে ২৮৮ জন মারা গেছেন। এর ভেতর ২০৭ জন পুরুষ ও ৩৩ জন নারীর পাশাপাশি ৪৮ শিশুও আছে। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১২৩ জন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে মোট ৩৪ জন মারা গেছেন। এই মৃতদের মধ্যে ১৭ জনই কৃষক।
মার্চ থেকে মে—এই তিন মাসেই হয় প্রায় ৫৯ শতাংশ বজ্রপাত। আর বর্ষায় জুন থেকে সেপ্টেম্বরে ৩৬ শতাংশ। তবে মোট বজ্রপাতের ৭০ ভাগই হয় এপ্রিল, মে ও জুনে। বায়ুদূষণকেই মূল কারণ বলছেন গবেষকরা। এ সময়ে বাতাসে কার্বন, সালফেটসহ বস্তুকণার আধিক্য থাকে। এতে বজ্রপাতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘মেঘের যে ফিজিক্যাল প্রোপার্টিস আছে, ক্রুপেল, আইস পার্টিকেল—এই জিনিসগুলো এটার মেকানিজমটাকে পরিবর্তন করে ফেলে দেখে এরোসল কণা ছড়িয়ে যায়। তা জলীয় বাষ্পকে পানির ফোঁটায় ঘনীভূত করে বরফে স্ফুটিক আকারে জমা হয়। এসব স্ফুটিকের মধ্যে যখন সংঘর্ষ বেশি হয় তখনই চার্জ উৎপন্ন হয় বজ্রপাত হয়।’
সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে উত্তর-পশ্চিম থেকে আসা গরম বাতাস, সঙ্গে স্থানীয় উত্তপ্ত আবহাওয়া মিলে তীব্র হচ্ছে তাপপ্রবাহ। গবেষকরা বলছেন, কোথাও এক ডিগ্রি উষ্ণতা বাড়লে বজ্রপাত বাড়ে ১২ শতাংশ।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাস এবং এই জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ বাতাসে মিথস্ক্রিয়ার ফলে বজ্রমেঘ তৈরির ঘনঘটা বেড়েছে। শুধু সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যে বেড়েছে তা নয়, আমাদের ল্যান্ড-সার্ফেস তাপমাত্রাও বেড়েছে। সুতরাং বজ্রমেঘ তৈরির ক্ষেত্রে এসব ল্যান্ড-সার্ফেস তাপমাত্রাও বাড়তি জোগান দিচ্ছে।’
মৌসুমী বায়ু দেশের আকাশে আসার আগের দুই মাস এপ্রিল ও মে মাসে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে এর প্রকোপ থাকে বেশি। বর্ষায় তীব্রতা বাড়ে সুনামগঞ্জসহ রাঙামাটি–চট্টগ্রামে। শীতে বেশি আক্রান্ত হয় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মানুষ। সম্প্রতি বজ্রপাতকবলিত জেলার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।