রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে দীর্ঘসময় পানি পান করা হয় না। এতে শরীরে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। তাই রোজায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখা। পুরো মাসের রোজা ও কাজকর্মের জন্য শরীরকে ফিট ও সুস্থ রাখা প্রয়োজন। সেজন্য দরকার স্বাস্থ্যকর খাদ্য নির্বাচন।
ইফতার
রোজায় সারাদিন সিয়াম সাধনার পর প্রথম খাবার হলো ইফতার। সেজন্য ইফতার হতে হবে স্বাস্থ্য উপযোগী, সহজপাচ্য এবং ধীরে ধীরে রক্তে মিশে শক্তি দেবে এমন খাবার। যেমন:
১. ৩ থেকে ৪টি খেজুর ও পানি দিয়ে রোজা ভাঙতে পারেন। সম্ভব হলে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি পান করুন।
২. কম মশলা ও কম তেলে ছোলা ভুনা খেতে পারেন। প্রয়োজনে ছোলা ভুনায় টমেটো ও লেবু দিতে পারেন। এতে ডায়াটারি ফাইবার যেমন বাড়বে, তেমনি স্বাদও উন্নত হবে।
৩. আদা কুচি ও পুদিনা পাতা দিয়ে ছোলা মাখা খেতে পারেন। তরে পরিমাণে অল্প খেতে হবে। ১ থেকে ২ চা চামচের বেশি নয়। কারণ এটি সবার হজম নাও হতে পারে।
৪. ডাবের পানি শরীরের পানিশূন্যতা, ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স কিংবা ইউরিন ইনফেকশন দূর করবে।
৫. ঘরে তৈরি চিনি ছাড়া ফলের রস, তরমুজ, বেল, পেঁপের শরবত পান করতে পারেন। এই রোজায় কী নেই বাজারে? বাজার থেকে ফল আনুন আর কার্টুন। এরপর ব্লেন্ড না কারে হাতে কচলে বানিয়ে ফেলুন জুস বা ফলের শরবত। এতে ফাইবার অটুট থাকবে।
৬. আখের গুড়, লেবু, পুদিনা পাতা দিয়ে শরবত খান। কিংবা ফলের জুসে সামান্য আখের গুড় যোগ করুন। আখের গুড়ে শুধু লেবু যোগেও তৈরি হয় দারুণ শরবত।
৭. দই ও ফলের স্মুদি খেতে পারেন। দই, দুধ এর সঙ্গে কলা, তরমুজ, স্ট্রবেরী মিশিয়ে বানাতে পারে স্মুদি বা শেক। চাইলে তরমুজ ও দুধ মিশিয়ে বানাতে পারেন শরবর্ত-এ- মুহাব্বত।
৮. লাচ্ছি, লাবাং বা ঘোল খান। টকদই, পুদিনা পাতা, বিট লবণ, লেবুর রসযোগে বানাতে পারেন লাচ্ছি, লাবাং, মিন্ট লেমনেড। যা খুবই স্বাস্থ্যকর। ঠান্ডা দুধের ননী দিয়ে বানিয়ে খেতে পারেন ঘোল। এতে সারাদিনের রোজার পর পরম শান্তি ও পুষ্টি মিলবে শরীরে।
৯. তোকমা, ইসুবগুল, চিয়া সীডের শরবত খান। লেবুর শরবতে তোকমা বা ইসুবগুলের ভুসি যোগ করলে এই পানি অনেক বেশি সময় শরীরে পানি আটকে রাখবে।
১০. প্রয়োজনে চিড়ার শরবত খেতে পারেন আখের গুড় কিংবা টকদই দিয়ে। কিংবা খান দই চিড়া বা দই-কলা-চিড়া।
১১. একটা প্লেট সাজান ফল দিয়ে। যেমন: আপেল, খেজুর, বরই, পেঁপে, পেয়ারা, মাল্টা, নাশপাতি, তরমুজ, বাঙি, কলা, স্ট্রবেরিসহ নানা ফল। তবে, ফল ভালো করে ধুয়ে কেটে নিন প্লেটে।
১২. খেতে পারেন নানা সবজি ও শাক মিশিয়ে পাকোড়া বা বড়া, আলুর চপ, বেগুনি, কাবাব, সবজি রোল।
১৩. প্রতিদিন ইফতারে অবশ্যই একটা ডিম সিদ্ধ রাখবেন সবার জন্য। কাবাবজাতীয় খাবার খেলে পানি বেশি পান করবেন।
১৪. ঘরে তৈরি খিচুড়ি, সবজি স্যুপ, নুডুলস, স্যুপ নুডুলস, ভাত-মাছের ঝোল খেতে পারেন। খেতে পারেন গরম গরম ধোঁয়া উঠা সবজির ল্যাটকা খিচুড়ি।
১৫. নানা পদের ডেজার্টও খেতে পারেন। যেমন-দুধ, সাগু, ফালুদা, কম মিষ্টির পুডিং বা ফিরনী, নানা রকমের ফল দিয়ে সাগুর ডেজার্ট।
১৬. খেজুর, শরবত খাওয়ার পর যেতে পারেন এক বাটি হালিম। তবে কম তেল-মশলায় অবশ্যই ঘরে রান্না।
রাতের খাবার
১. হালকা কিছু খেতে চাইলে ভালো অপশন তো হল স্যুপ। চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ, মাশরুম স্যুপ, ব্রকলির স্যুপ কিংবা চিকেন স্টু খাবার পর খুব হালকা ফিল দিবে আপনাকে। কিন্তু শরীরের পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা ঠিকই পূরণ হবে।
২. মাছ বা মুরগি পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত বা রুটি খেতে পারেন। কিংবা সবজি-ডিম দিয়ে রুটি।
৩. প্রয়োজনে দুধ দিয়ে ওটস খেতে পারেন।
সেহরি
১. অবশ্যই নিয়মিত সেহরি খাবেন। নয়তো দুর্বলতা আপনাকে ঘিরে রাখবে।
২. ভাত-মাছ বা মুরগী কিংবা অল্প সবজি দিয়ে মাছের ঝোল বা সবজি দিয়ে মাছ-ভুনা খেতে পারেন।
৩. ডায়াবেটিক রোগীরা চাইলে রুটি খেতে পারেন পর্যাপ্ত সবজি।
৪. খেতে পারেন চিকেন-ভেজ স্যুপ।
৫. দুধ-কলা ভাত খান। কিংবা দু এক কাপ গরম দুধ।
৬. কিছুই খেতে না পারলে অন্তত ৩-৪ টি খেজুর খেয়ে এক কাপ দুধ বা পানি খান।
৭. অবশ্যই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত যতটুকু সময় জেগে থাকবেন কিছু সময় পরপর পানি পান করুন।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল