খাবার হজমের পর, সেই খাবারকে শরীরের কোষের জন্য প্রস্তুত করা, খাবারের বাড়তি অংশ শরীরের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য জমা রাখতে লিভারের ভূমিকা অনেক বেশি। লিভারে চর্বি জমার ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। লিভারে চর্বি জমা হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার বলে। লিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি জমা স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি জমলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বিভিন্ন কারণে লিভারে চর্বি জমতে পারে। যেমন- ওজন কমে যাওয়া, গর্ভাবস্থা, মদ্যপান, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ইনফেকশন, লিভারের জিনগত কিছু অসুখ, অপুষ্টি। বিপাকীয় গোলযোগের কারণে লিভারে যে চর্বি জমে, তার প্রধান কারণ ইনসুলিন নামের একটা হরমোনের কাজ করার অক্ষমতা। এর পেছনে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের জীবনাচরণ স্থূলতাকে বাড়িয়ে দেয়। যেমন: অতিরিক্ত তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, যথেষ্ট কায়িক পরিশ্রম না করা। এসব কারণে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিরা এই রোগের উচ্চঝুঁকিতে থাকেন।’
চিকিৎসক ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরীর মতে, ফ্যাটি লিভারের তেমন কোনো লক্ষণ নেই। কিছুকিছু ক্ষেত্রে- অবসাদ ও দুর্বলতা, বদহজম। রোগটি অনেকদূর অগ্রসর হয়ে গেলে- পেটের ডানপাশে ব্যথা, পেটে চাকার অনুভব, জন্ডিস, রক্তবমি, কালো পায়খানাও হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে করণীয় হলো:
১. চিনিযুক্ত খাবার, ডেজার্ট, জুস বা পানীয় এড়িয়ে চলা।
২. রান্নায় ব্যবহৃত লবণ ছাড়া বাড়তি লবণ না খাওয়া।
৩. ময়দার তৈরি পাউরুটি ও পরোটা, সাদা ভাত, নান ও বেকারির খাবার কমিয়ে দেওয়া।
৪. অ্যালকোহল, রেড মিট এড়িয়ে চলা।
৫. সবুজ পাতাওয়ালা শাক খাওয়া।
৬. কাঁচা সবজির সালাদ খাওয়া।
৭. ডাল ও বীজজাতীয় খাবার, সামুদ্রিক মাছ খাওয়া।
৮. খাদ্যতালিকায় ওটমিল বা লাল আটার বা যবের রুটি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখা।
চিকিৎসক ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরী মনে করেন, শরীরে জমে থাকা মেদ ঝরিয়ে ফেলা হলো এই রোগ প্রতিকারের সর্বজনস্বীকৃত বিজ্ঞানসম্মত উপায়। শরীরের ওজনের ৫ শতাংশ-১০ শতাংশ কমিয়ে ফেললে, এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে জীবনাচরণ পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন:
১. সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা, যাতে শরীর থেকে ঘাম দেয়।
২. অফিসে একটানা বসে কাজ না করা।
৩. একটানা ৩০ থেকে ৬০ মিনিট কাজ করার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা।
৪. বেশি রাত পর্যন্ত জেগে না থাকা এবং রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করা।
৫. অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে কিছুক্ষণ হাঁটা।
৬. সম্ভব হলে লিফট ব্যবহার না করে, সিঁড়ি ব্যবহার করা।