এওর্টিক ডাইসেকশন একটি মারাত্মক রোগ, যেখানে শরীরের সবচেয়ে বড় রক্তনালী, এওর্টা বা মহাধমনীর প্রাচীরে ছিদ্র হয়ে এওর্টার বাইরের স্তরে রক্ত জমে। এওর্টা হলো সেই রক্তনালী, যা আমাদের হৃদয় থেকে রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পাঠায়। যখন এওর্টার দেয়ালের কোনো অংশ ফেঁটে যায়, তখন রক্ত ভেতরে প্রবাহিত হয় এবং রক্তনালীটির বাইরের অংশ আলাদা হয়ে যায়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
এওর্টিক ডাইসেকশন কেন হয়?
এওর্টিক ডাইসেকশন সাধারণত হয়ে থাকে যখন এওর্টার দেয়ালের কোনো অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতা সাধারণত অনেক বছর ধরে চলে এবং এক সময় এটি ফেটে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, এটা উচ্চ রক্তচাপ, মহাধমনীতে চর্বি/ক্যালসিয়াম জমাট বাঁধা, কানেক্টিভ টিস্যু ডিসঅর্ডার বা জন্মগত হৃদরোগের কারণে হয়। উচ্চ রক্তচাপ এবং ধূমপান এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এওর্টিক ডাইসেকশনের লক্ষণ:
এওর্টিক ডাইসেকশন সাধারণত হঠাৎ শুরু হয়। এর প্রধান লক্ষণ হলো:
১. বুকে/পিঠে তীব্র বা তীক্ষ্ণ ব্যথা।
২. শ্বাসকষ্ট।
৩. মাথা ঘোরা বা অসুস্থ লাগা।
৪. দ্রুত হৃৎস্পন্দন।
৫. প্রচুর ঘাম হওয়া।
৬. ব্লাড প্রেসার অত্যধিক কমে যাওয়া/ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
৭. কখনো কখনো কথা বলায় সমস্যা বা একপাশে শক্তি হারানো (যেমন: স্ট্রোকের মতো)।
আপনি যদি এই লক্ষণগুলো অনুভব করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
এওর্টিক ডাইসেকশনের ঝুঁকি:
- যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
- আপনি ধূমপান করেন।
- কানেক্টিভ টিস্যু ডিসঅর্ডার রোগে আক্রান্ত হওয়া বা পরিবারে কারো এ রোগের ইতিহাস থাকা।
- আপনার হৃদয়ে কোনো জন্মগত সমস্যা থাকে।
বাংলাদেশে এই ধরনের রোগের সচেতনতা কম এবং অনেক সময় জরুরি চিকিৎসা পাওয়া যায় না, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
এওর্টিক ডাইসেকশনের চিকিৎসা
এওর্টিক ডাইসেকশন যদি দ্রুত শনাক্ত করা না যায়, তবে এটি খুব বিপজ্জনক হতে পারে। চিকিৎসকরা সাধারণত সিটি স্ক্যান বা ইকোকার্ডিওগ্রাম ব্যবহার করে রোগটি শনাক্ত করেন। এরপর রোগের অবস্থা দেখে চিকিৎসা করুন।
টাইপ A (উপরের অংশ): যদি ফাটা অংশটি/ ছিদ্রটি হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি মহাধমনীতে হয়, তবে তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন।
টাইপ B (নিচের অংশ): মহাধমনীর নিচের অংশে ডাইসেকশনে চিকিৎসকরা প্রথমে ঔষধ দিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেন এবং পরে অস্ত্রোপচার বা এন্ডোভাস্কুলার স্টেন্ট করতে পারেন।
বাংলাদেশে এওর্টিক ডাইসেকশন
বাংলাদেশের অনেক মানুষ এই রোগ সম্পর্কে জানেন না এবং এর লক্ষণও জানেন না। এর ফলে মানুষ সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে এমন পরিস্থিতিতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের উচিত, এই রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং টারশিয়ারি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা করা।
এওর্টিক ডাইসেকশন একটি খুবই বিপজ্জনক রোগ, কিন্তু যদি এটি দ্রুত শনাক্ত এবং চিকিৎসা করা যায়, তবে অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। আশার কথা এই যে, এসব জটিল রোগের শনাক্তকরণ এবং সার্জারি এখন আমাদের দেশে অনেকটাই উন্নত, যদিও তা কিছুটা ব্যয়বহুল, ঢাকা কেন্দ্রিক এবং অল্প সংখ্যক সার্জন নির্ভর। তাই, বাংলাদেশে জনসচেতনতা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে এ ধরনের রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যেতে পারে।
লেখক: মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক অ্যান্ড এওর্টিক সার্জন, জাতীয় হৃদ্রোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল